খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পলিসি আর উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ ফসলের কারণে আমরা আজকে ১৭ কোটি মানুষকে খাইয়ে চাল রপ্তানী করার জন্য সাহস পাচ্ছি। আমরা এখন চাল রপ্তানীর জন্য বাজার খুঁজছি এবং সেটা সরু চাল না মোটা চাল, যেটা কেউ খেতে চায় না।
আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সভাকক্ষে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ ও বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটি কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ‘বার্ষিক উদ্ভিদবিজ্ঞান সম্মেলন-২০১৯’ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমরা দেশটাকে যদি সবাই মিলে ভালোবাসি, আমাদের মধ্যে যদি দেশপ্রেম ঠিকমতো থাকে তাহলে কিন্তু অনেক আগেই দেশটা স্বপ্নের সোনার বাংলা হয়ে যেত। আমাদের পথ চলার ভুলও রয়েছে, দিক নির্দেশনায় ভুল রয়েছে এবং বিভিন্ন সরকারের সময় বিভিন্ন রকমের জটিলতার সৃষ্টি হয়ে আমরা আস্তে আস্তে পিছাতে পিছাতে আবার মাথা ঘুরে দাড়িয়েছি। এক সময় আমাদের সাত কোটি মানুষের পেটে ভাত জুটতো না, ভাতের মাড় খেয়ে থাকতে হয়েছে, বিদেশ থেকে চাল আমদানি করতে হয়েছে কিন্তু বর্তমানে আমরা সেই জায়গা থেকে অনেক উন্নতি লাভ করেছি। সাত কোটি মানুষ আমরা অভাবে থাকতাম সেখানে আজ ১৭ কোটি মানুষকে খাদ্যে পূর্ণ সহায়তা দিয়েও বিদেশ থেকে কোনো আমদানি না করে আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। যেখানে মানুষ বাড়ছে জমি কমছে কিন্তু তারপরও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, এখন আমরা ভেজালমুক্ত পুষ্টিমান খাদ্য খুঁজছি। এই সরকার ভেজালের বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্যের জন্যে কাজ করছে। তেমনিভাবে আমরা দানাদার খাদ্য বিশেষ করে পুষ্টিমান চাল সরবরাহে চেষ্টা করছি।
এর আগে সকাল সাড়ে নয়টা ‘Novel Approaches and Recent Development in Plant Sciences’ প্রতিপাদ্যে পঞ্চমবারের মতো আয়োজিত এ বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
দিনব্যাপী সম্মেলনে ছিল পোস্টার সেশন, প্ল্যানারি সেশন, সায়েন্টিফিক সেশন, বিজনেস সেশন। সম্মেলনে ভারত, কানাডা ও ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক পরিবর্তনে বিরুপ আবহাওয়ায় বেচেঁ থাকা ফসল উৎপাদন, উদ্ভিদের বিভিন্ন জাত, ব্লু ইকোনোমি (সমুদ্র অর্থনীতি), প্লান্ট শৈবাল তত্ত্ব, প্লান্ট বায়ো ডাইভার্সিটি, অনুজীব বিজ্ঞান, কোষ বিদ্যা, জেনেটিকস ইত্যাদি বিষয়ের উপর দুটো সেশনে প্রায় এক শতাধিক বৈজ্ঞানিক পত্র ও গবেষণা উপস্থাপন করা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো উদ্ভিদ। এ প্রাকৃতিক সম্পদের বিস্তার লাভের সঙ্গে আমাদের বেঁচে থাকার সম্পর্ক নিবিড়। বিশ্বের অস্তিত্ব রক্ষাসহ সব মনুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি মৌলিক চাহিদা মেটাতে আমারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উদ্ভিদজাত দ্রব্যের উপর নির্ভরশীল। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে ও অপরিকল্পিত নগরায়নে অনেক মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ হারিয়ে যাচ্ছে কিংবা বিলুপ্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের অধিক সচেতন হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ‘গত ছয় বছরে আমি ৫ হাজারের বেশী গাছ লাগিয়েছি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। আবার গাছ লাগালে হবে না সেগুলোর যত্ন করতে হবে। ভবিষতে গাছ যাতে কাটা না পড়ে সেজন্য পরিকল্পিত স্থানে গাছ লাগাবো এবং ভালো গাছ লাগাবো।
এ সময় তিনি তার বক্তব্যে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা যাতে অধিক সংখ্যায় চাকরি পায় সে ব্যবস্থা করার জন্য খাদ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাহমিদা বেগম, বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা প্রমুখ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার দিনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে ‘সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসুচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধনে বিভিন্ন ধর্মের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।
এ সময় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জিল্লুর রহমান বলেন, পূজার দিনে নির্বাচনের মত হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানই। আমাদের স্বাধীনতা ৩০ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনে সন্মানের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। সেই স্বাধীনতা কেউ ভূলুণ্ঠিত করতে চাইলে আমরা তা হতে দেব না। মহামান্য হাইকোর্ট তারিখ পরিবর্তনের রিট খারিজ করেছে। এ থেকে বুঝা যায় দেশের বিচার ব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। আমরা অনুরোধ করছি আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য নয়তো আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হব।