আগামী ১৭ মার্চ থেকে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার আবারও ১১ দশমিক ২৮ হবে। তবে এ ক্ষেত্রে অটোমেশনের শর্ত দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত প্রথম পর্যায়ে বাস্তবায়ন হবে জেলায়, এরপর উপজেলা পর্যায়ে। অটোমেশন হওয়ার পর ডাকঘর সঞ্চয়পত্র স্কিমে টিআইএন ও জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। তবে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো টিআইএন বা জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে না। বুধবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি খেলাপি ঋণ আদায়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন হবে বলে জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের অর্ধেক আমরা অটোমেশন (স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা) করে ফেলেছি। অপব্যবহার রোধ করতেই অটোমেশন করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্র ব্যাংক ও পোস্ট অফিস থেকে পাওয়া যায়। ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে পুরোটাই অটোমেশন হয়েছে। অটোমেশন করা না হলে এ স্কিমটা যাদের জন্য করা হয়েছিল তারা পাচ্ছিল না। যাদের পাওয়ার কথা ছিল না তারা এ সুবিধা নিয়ে নিচ্ছিল। এতে আমাদের উদ্দেশ্য পূরণ হচ্ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে লিমিট বাড়ানো হয়েছে। পেনশনারদের আরো বেশি করা হয়েছে। এখন যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে আমার মনে হয় না কারো এর চেয়ে বেশি প্রয়োজন আছে। ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমে বিনিয়োগ সীমাও ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত। যারা গ্রামের মানুষ শহরে আসতে পারে না, তাদের জন্য এটা যথেষ্ট। সেখানে সুদের হার ১১.২৮ শতাংশ রাখা হয়েছে। ১৭ মার্চ অটোমেশন শেষ হলে আগের সুদের হারে চলে যাবে। অটোমেশনের কাজ শেষ হলেই এ ঘোষণা দিতে পারব।’
ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার কমানোর কারণ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন দেখলাম সবাই চলে যাচ্ছে পোস্ট অফিসে, বন্ধ করব কিভাবে, বন্ধ করতে হলে বলতে হবে ইন্টারেস্ট নেই। যদি একবার কিনে ফেলে তাহলে তো করার কিছু নেই।’
ডাকঘর অটোমেশন হওয়ার পর গ্রাহকদের টিআইএন ও আইডি নম্বর নেওয়া হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জানতে চাই কারা কেনে। পোস্ট অফিসে যে ৩০ লাখ আছে সেখানে লাগবে। তবে প্রথম দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আমরা কিছু চাইব না। তাদের কোনো রকম টিআইএন জমা দিতে হবে না।’
খেলাপি ঋণ আদায়ে কোনো করপোরেশন করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এটা করব। বাজেটে বলা আছে। বাজেটে যেসব আইন করব বলেছি সে আইনগুলো করা হবে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কর্পোরেশন করব। তার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডিদের মতামত নিচ্ছি। প্রসঙ্গক্রমে তিনি জানান, ব্যাংক কমিশন করা হবে অবশ্যই, তবে সময় লাগবে। এদিকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ডাকঘর সঞ্চয় স্কিমের সুদহার নিয়ে ব্যখ্যা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত সঞ্চয় স্কিমের মুনাফার হার কমানো হয়নি। পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১.২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১.০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১১.৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১.৭৬ শতাংশ বিদ্যমান রয়েছে। এ ছাড়া ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের সুদহারও একই আছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য সব ব্যাংকঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার সরকারি অনুশাসনের ধারাবাহিকতায় ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক-সাধারণ হিসাব এবং ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক-মেয়াদি হিসাবের মুনাফার হার কমানো হয়েছে। ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক-সাধারণ হিসাবে মুনাফার হার ৫ শতাংশ। আর ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক-মেয়াদি হিসাবে মেয়াদান্তে ৬ শতাংশ সুদ করা হয়েছে।