বাংলাদেশের মানুষ এক ভয়ংকর মরণব্যাধির বেষ্টনীতে বাস করছে জানিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকেই এই বেষ্টনী ভাঙতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘এক পাপুলকে কুয়েতে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরো কত পাপুল যে তৈরি হয়ে আছে সেটা বলা মুশকিল। চলমান দূঃশাসনের মধ্যেই এরা তৈরি হবে, আর পাপুলরা হবে এমপি। তাদের জন্য বিভিন্ন রাস্তাও খোলা থাকবে। আজ দেশের মানুষ এক ভয়ংকার মরণব্যাধির বেষ্টনীতে বাস করছে। এই বেষ্টনী ভাঙতেই হবে।’
রিজভী বলেন, ‘সাতক্ষীরা থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদকে গ্রেফতার করেছে, এটা কিন্তু কেউ বিশ্বাস যায় না। আবার ফেসবুকে যদি কেউ কিছু লেখে, তাহলে রাতের অন্ধকারে ছেলে-মেয়ে যাই হোক তাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে আসে। প্রতিবাদ বন্ধ করার জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে রাতের অন্ধকারে তুলে নেওয়া হলেও স্বীকার করা হয় না।’
বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত করোনা সনদ বিক্রির অর্থ, মানব পাচার এবং মহাদুর্নীতির প্রকোপ বৃদ্ধির প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যে সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করে না, সে সরকার তার সবকিছু করতে পারে, যত দুর্নীতি অবিচার আছে সব নির্দ্বিধায় করতে পারে। এই সাহেদ-সাবরিনা কোথায় ছিল? তারা একত্ববাদী একদলীয় শাসনব্যবস্থার সরকারের অধীনে লালিত পালিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল সমাজসেবাসহ প্রতিটি সেক্টর ধ্বংস করেছে সরকার। কারণ তারা মেগা প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত। আজ হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ নেই, মাস্ক নেই। তারা নকল মাস্ক নিয়ে এসেছে। ভেন্টিলেটর বর্তমানে জীবন বাঁচানোর অন্যত মাধ্যম, সেটিও নেই। আর এইসব দুর্নীতির সাথে মন্ত্রী, নেতাকর্মী এমনকি মন্ত্রীর ছেলেরাও জড়িত। তাই মানুষ মরছে রাস্তায়, মানুষ মরছে অ্যাম্বুলেন্সে। মানুষ বাঁচানোর কোনও সরঞ্জামই দেশে এখন নেই।’
সরকারি হাসপাতালগুলো নরকে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে এমনভাবে বিল উঠানো হয় যে মানুষ বেঁচে থাকলেও মরার মতো হয়ে যায়। এই হচ্ছে সরকার যে মানুষ মরে যায় যাক, নিজে বাঁচি এটা হচ্ছে সরকারের নীতি।’
রিজভী বলেন, ‘আজকে টিউশন ফি বাতিলের দাবি উঠেছে। এমনিতেই ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারছে না তারপরে টিউশন ফি পুরোপুরি দিতে হবে। তার জন্য অভিভাবকরা টিউশন ফি বাতিলের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু সেদিকে সরকার কর্ণপাত করছে না। আর যদি মেগা প্রজেক্ট তাড়াতাড়ি করার দাবি উঠত তাহলে তারা খুব দ্রুত কর্ণপাত করতো। কারণ এখানে তাদের নেতাকর্মীদের পকেট ভারী হয়। একটা মেগা প্রজেক্টের ফলে প্রতিবছর ১০ থেকে ১৫ গুণ অর্থ বেড়ে যায়। কারণ এই টাকাগুলো তাদের নেতাকর্মীদের পকেটএ যায়। আর এই কারণে মেগা প্রজেক্ট এর প্রতি তাদের এত গুরুত্ব।’
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘আজ বিএনপি সামর্থ অনুযায়ী ত্রাণ, পিপিই এবং তাদের ডাক্তাররা মানুষদের কে সাহায্য করছে। এটা তাদের সহ্য হয়না। এটা না সহ্য হওয়ার কারণে এখন শুরু হয়েছে মিথ্যা মামলা। কারণ প্রতিবাদ করলেই বেরিয়ে আসবে সাহেদ-সাবরিনার মত রূপকথা। আর এই ১২ বছরে আরো কত সাহেদ-সাবরিনা তৈরি করে রেখেছে, তা বলা মুশকিল। তারা তো অনেক আগেই আজিমপুর কবরস্থানে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ- সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে এবং মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সহ-সভাপতি ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় মানবান্ধনে দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, তাঁতী দলের যুগ্ম-আহ্বয়ক ড.কাজী মনিরুজ্জামান মনির, স্বেচ্ছাসেবক দল উত্তরের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।