আবারও ভোট উৎসবে যোগ দিচ্ছে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, নওগাঁ-৬ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী ২৯ জনের কাছে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে দলটি। এই ২৯ জনের মধ্য থেকেই চার জনকে বেছে নেবে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন বোর্ড। শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বসবে মনোনয়ন বোর্ডের সভা।
দলীয় সূত্রমতে, রেওয়াজ অনুযায়ী মনোনয়ন ফরম বিক্রি, জামানতসহ গ্রহণ, সাক্ষাৎকারের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়ন বোর্ডে ডাকা হলেও দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে ধানের শীষের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েই আছে। কেবল নাম ঘোষণার আনুষ্ঠানিকতা বাকি।
সূত্রমতে, নওগাঁ-৬ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন আনোয়ার হোসেন বুলু। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলুর বড় ভাই আলমগীর কবির গত নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত ইসরাফিল আলমের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবার তিনি নির্বাচনে আগ্রহী নন। তাই ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বুলুকে এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান।
অবশ্য এ আসনে আবদুস শুকুর, এম এম ফারুক জেমস, মাহমুদুল আরেফিন স্বপন, এসহাক আলী, আতিকুর রহমান রতন মোল্লা, শেখ মো. রেজাউল ইসলাম, মো. শফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ, রফিকুল আলম রফিকসহ আরও অন্তত ৮ জন আগ্রহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে পুরোনো প্রার্থীই রাখছে বিএনপি। গত নির্বাচনে আসনটিতে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুমানা মাহমুদ কনকচাঁপা। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী প্রয়াত মোহম্মদ নাসিমের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন তিনি। এবারও তার ওপরই আস্থা রাখছে বিএনপি। শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) মনোননয়পত্র সংগ্রহের পর পূরণ করে জমা দিয়েছেন কনকচাঁপা।
তবে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি একা নন। টিএম তাহজিবুল ইসলাম, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, রবিউল হাসান ও সেলিম রেজা নামে আর পাঁচ আগ্রহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু কনকচাঁপার দিকেই পাল্লা ভারি হয়ে আছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা-৫ আসনে নবী উল্লাহ নবীই হচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন ঢাকা মহানগর বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা। এবার অনুমিতভাবেই তার হাতেই ধানের শীষ তুলে দিচ্ছে বিএনপি।
অবশ্য এ আসনটিতেও বিএনপির একাধিক আগ্রহী প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির সহ-শিল্প বিষয়ক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, পেশাজীবী নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, মহানগর নেতা মো. জুম্মন মিয়া, আকবর হোসেন নান্টু ও আনোয়ার হোসেন সর্দার। কিন্তু নবী উল্লাহ নবীকে বাদ দিয়ে এদের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই বলে জানা গেছে।
ঢাকা-১৮ আসনে দুই জনের কথা মাথায় রেখে এগোচ্ছে বিএনপি। এরা হচ্ছেন— ঢাকা উত্তর যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন এবং ঢাকা মহানগর (উত্তর) বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এম কফিল উদ্দীন আহমেদ। জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক তৎপরতা বিবেচনায় এ আসনের জন্য এ দু’জনকেই যোগ্য মনে করছে বিএনপি। দু’জনের সঙ্গে কথা বলে যে কোনো একজনকে বেছে নেবে বিএনপি।
অবশ্য গত নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা শহীদ উদ্দীন মাহমুদ। এবার তিনি নির্বাচনে আগ্রহী নন। তবে এ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য এম কফিল উদ্দিন ও এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন ছাড়াও , ইসমাইল হোসেন, বাহাউদ্দিন সাদী, মোস্তফা জামান সেগুন, মো. আখতার হোসেন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হবে এবং এদের মধ্য থেকেই চার জনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হবে। এ ব্যাপারে মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।’
‘আমরা মনে করি, যারা প্রার্থী হওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন, দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন, পূরণ করে জমা দিয়েছেন, তারা সবাই প্রার্থী হওয়ার যোগ্য। কিন্তু সবাইকে তো আর মনোনয়ন দেওয়া যাবে না। যারা মনোনয়ন পাবেন, তাদের হয়ে সবাই কাজ করবে, এটাই প্রত্যাশা’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ঢাকা-৫ এবং নওগাঁ-৬ আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনেরে উপ-নির্বাচনের তফসিল কমিশন এখনও ঘোষণা করেনি।