নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনে সাংগঠনিক সমস্যার সমাধান সম্ভব: কামাল

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন এস এম কামাল হোসেন। তিনি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর জোনাসুরে ১৯৬০ সালের ৩১ জানুয়ারি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছাত্রলীগের করার মাধ্যদিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

এস এম কামাল হোসেন শিক্ষার্থী অবস্থায় ওরাকান্দি মিড হাই স্কুল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, খুলনা মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, খুলনা জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জাতীয় ছাত্রলীগের পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচীত হন। এর পর ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দীর্ঘদিনের উপ কমিটির সহ-সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলেন।

এস এম কামাল হোসেন ১৯৭৬ সালে ওরাকান্দি মিড হাই স্কুল থেকে এস এস সি, খুলনা সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন লাইব্রেরি সাইন্স নিয়ে। সিটি ল কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করে ঢাকা বারের সদস্য হন এস এম কামাল হোসেন।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে পলিটিক্স নিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে থাকা এস এম কামাল হোসেন বলেন, আমরা সবাই শেখ হাসিনার কর্মী। তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই আমাদের দায়িত্ব।

এস এম কামাল হোসেন বলেন, আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সকল নেতাকর্মীরা আস্থাশীল। তার নির্দেশনা অনুযায়ী সবাই যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন করে, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ের সাংগঠনিক সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা সম্ভব।

‘নওগাঁ উপনির্বাচনে ৩৩ জন মনোনয়ন চাওয়া প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত এবং সাংগঠনিক সমস্যা যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। মনোনয়নের আগে অনেকে মানববন্ধন করেছেন। আমি সেখানে গিয়েছি, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানকার সকলেই জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল।’

জেলা উপজেলায় নেতা বানানোর ক্ষেত্রে পারিবারিক বা ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে সবারই ঘনিষ্ঠ শুভাকাঙ্ক্ষী ও পারিবারিক সম্পর্ক থাকতে পারে। কিন্তু অযোগ্য ব্যাক্তিকে নেতা বানানোর প্রশ্নই আসে না। এমনটি হলে দায়িত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া দায়িত্ব সঠিক ও নিরপেক্ষতার সাথে পালন করলে তৃণমূলকে ঢেলে সাজানো কঠিন কাজ না।’

পলিটিক্স নিউজকে এস এম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। ‘আমার দায়িত্বাধীন বিভাগে আমি চাই, দলের সবাইকে নিয়ে সমন্বয় করতে। জননেত্রী শেখ হাসিনা যেটা বলে দেন, সে অনুযায়ী আমরা কেন্দ্রীয় নেতারা যদি কাজ করি, কোনও ব্যক্তিগত লোক পছন্দ না করি, তাহলে যেকোনো জেলায় কেন্দ্রীয় নেতারা সমস্যার সমাধান করতে পারেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আগেও নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা প্রতিযোগিতা ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু প্রতিহিংসা নয়। আমরা প্রতিহিংসা বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করছি। মারামারি বন্ধ করার চেষ্টা করছি।’

দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গত বছরের নির্দেশনা ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্মেলন করার বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে এস এম কামাল বলেন, ‘আগামী ৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় একটি সভা রয়েছে। অক্টোবর মাসে কয়েকটি উপনির্বাচন আছে। নির্বাচন শেষে আমরা সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করব।’

রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়ে এস এম কামাল পলিটিক্স নিউজকে বলেন, ‘আমার নভেম্বর মাসের পরিকল্পনা হলো, নেত্রীর অনুমতি ও সাধারণ সম্পাদকের সহযোগিতায় বর্ধিত সভা করে ইউনিয়ন-উপজেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দেব। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে লাগাতার জেলাগুলোর বর্ধিত সভা করব। প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দিয়ে আসব। চেষ্টা করব ডিসেম্বরের আগে রাজশাহী বিভাগের সব কটি জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করতে।’ তৃণমূল পর্যায়ে দলের বিভিন্ন কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচনে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সেখানকার নেতাকর্মীদের পছন্দের ভিত্তিতে চুড়ান্ত হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের কোনও পছন্দ-অপছন্দ না থাকাই ভালো মনে করেন এস এম কামাল।

কমিটিতে স্থান দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয় দেখা হচ্ছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, যারা দুঃসময়ে আওয়ামী লীগ করেছে তাদের কমিটিতে নিয়ে আসা হয়েছে। আমার দরকার হলো একজন ভালো মানুষ যিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন। কিন্তু কোনও সুবিধাবাদী লোক, কোনও দলের মস্তান ছিল, সন্ত্রাসী, জামাত-শিবির সঙ্গে যুক্ত ছিল- এই ধরনের লোক আমরা দলের কোনও স্তরে জায়গা দেব না। জেলা সভাপতি-সম্পাদক প্রস্তাবের সকলকে আমরা অনেক সময় চিনি না। কিন্তু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক রাজনৈতিক নীতি অনুসারে দায়িত্ব দিয়ে থাকি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে ছাত্ররাজনীতি করতে কী ধরনের যোগ্যতা প্রয়োজন? জানতে চাইলে কামাল বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ করতে চায়, আমি মনে করি তাদের বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে, শেখ হাসিনা সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানতে হবে। ছাত্ররাজনীতি করলেও তার মূল লক্ষ্য থাকবে লেখাপড়া। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। সততা নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করতে হবে। এই লক্ষ্য নিয়ে যারা রাজনীতিতে আসবে, আমি মনে করি তাদের দলে জায়গা পাওয়া সহজ। তাদের জায়গা দেওয়া উচিত।’

করোনায় সহযোগী সংগঠনের বিষয়ে পলিটিক্স নিউজরে করা এক প্রশ্নের জবাবে এস এম কামাল বলেন, ‘করোনার সময়ে আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সবচেয়ে বেশি ছিল। কেননা বিপদের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো একজন রাজনীতিবিদের অন্যতম উদ্দেশ্য। সে ক্ষেত্রে আমরা মনে করি জননেত্রী শেখ হাসিনা সে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং তার নির্দেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগও কিন্তু এই করোনার সময় ভালো কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।’

করোনায় জনসাধারণের হক মেরে খাওয়াদের বিরুদ্ধে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে এস এম কামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ত্রাণ তহবিল গঠন করে দেশের জনগণের পাশে আমরা থেকেছি। এর মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে ত্রাণের চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে তাদেরকে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে বহিষ্কার করা হয়েছে। এবং যারা চেয়ারম্যান কিংবা কোনও ইউনিটের সভাপতির দায়িত্বে ছিলো তাদেরকে আমরা বহিষ্কার করেছি।