“পুরান ঢাকার মাঞ্জা পাখিদের খাবার নিয়ে নিসর্গ পাশে দাঁড়ালো”

বাংলাদেশের আবাসিক পাখির প্রজনন মৌসুম গ্রীষ্মকাল। বেশির ভাগ পাখিই এ সময় ডিম দেয় ও বাচ্চা ফোটায়।

শহুরে পাখির সবচেয়ে বড় সমস্যা বাসা এবং খাবার। পুরান ঢাকা্র দায়রা জর্জ কোর্ট, ভিক্টোরিয়া পার্ক ( বাহাদুর শাহ পার্ক), সেন্ট থমাস গীর্জা, জগন্নাথ বিশ্ব্যবিদ্যালয়, পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, বাংলা বাজার সরকারি মহিলা স্কুল, মুসলিম গভর্নমেন্ট স্কুল,
কবি নজরুল কলেজ এবং পাটুয়াটুলিতে অবস্থিত ব্রাহ্ম সমাজ জুড়ে থাকা গাছাপালায় পাখি এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে কাজ করছে নিসর্গ।

শুরুতে পাখিদের উদ্দেশ্য প্রতিদিন ১কেজি খাবার দেয়া হত। এখন প্রতিদিন ৫কেজি খাবার দিতে হচ্ছে। নিসর্গের পাখির প্রতি প্রেম দেখে পাশে দাঁড়িয়েছে পুরান ঢাকার মাঞ্জা সংগঠন। মাঞ্জা সংগঠনের সদস্য আরমান হোসেন বলেন,
আপাতত এক মাসের খাবার আমরা নিসর্গের হাতে পৌঁছে দিয়েছি। এই কার্যক্রম আমারা চলমান রাখবো।

তিনি আরও বলেন, করোনাকালে ঢাকায় পাখিদের সংখ্যা বেড়েছে। বাসা বানানোর জায়গা প্রসারিত হয়েছে। খাবারের চাহিদা বেড়েছে। ঢাকা শহরে এক সময় প্রচুর পাখি দেখা যেতো।

এখন কাক ছাড়া কোনো পাখিই খুব একটা দেখা যায় না৷ প্রতিটি শহরে আমরা চাইলেই পাখিদের জন্য পানিয় জলের ব্যবস্থা করে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারি। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র‍্য নিয়ে কাজ করার এই মহৎ উদ্যোগে সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ রইল।

নিসর্গের সদস্যরা প্রতিদিন সকাল বিকাল খাবার দিয়ে যাচ্ছে নিঃস্বার্থ ভাবে।

৬ মাস আগে এর কার্যক্রম শুরু হয় তখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছে নিসর্গের গোপাল, তুষার , দিপু ,আমিত।

নিসর্গের অন্যতম সদস্যা গোপাল বলেন,জীববৈচিত্র্য উন্নয়নের লক্ষ্যে শুরুতে প্রতিদিন এক কেজি খাবার পাখি’দের দিতে শুরু করেছিলাম। সব রকম পাখির কথা মাথায় রেখে আমরা মিক্সড খাবার দিতে শুরু করেছি।

আজ প্রায় ৬ মাস পর প্রতিদিন ৫ কেজি খাবার দিতে হচ্ছে। আমরা আশা করছি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন মেগাসিটি গুলোর মত ঢাকাও কবুতরের বিচরণ ক্ষেত্র হবে।

এই ৬ মাসে সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে জালালির ঝাক, শালিকের ঝাক, চড়ুইপাখির ঝাক এবং সংখ্যায় কম হলেও এখন দোয়েল, টুনটুনি, ঘুঘু, বুলবুলি, ময়না, ধনেশ, কাঠঁ-ঠোকড়াসহ নানান প্রজাতির পাখির ডাকাডাকিতে বেশ ভালো একটি পরিবেশ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। কোকিলের মধুর সুর এখন নিয়মিত আমাদের এই এলাকায়।
তিনি বলেন, দৃশ্যপট যতই পরিবর্তন হচ্ছে আরও বড় পরিশরে কাজ করার আগ্রহ মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদের মাত্র কয়েক মাসব্যাপী নিসর্গ কর্তৃক জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ পরিচর্যা কার্যক্রমের ফলশ্রুতি। তিনি আরও বলেন মাঞ্জা সংগঠন যেভাবে আমাদের পাশে এসে দারিয়াছে আমরা চাই সবাই আমাদের পাশে এসে দারাক।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আসুন আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিবেশের যত্ন নিই। প্রকৃতিকে ভালোবাসলে প্রকৃতি কয়েক গুণ ফিরিয়ে দিবে আমাদের।

গবেষকরা বলছেন, এখনো ঢাকা শহরে সব ঋতু মিলিয়ে প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে৷
গবেষকরা আরো বলছেন, ঢাকা শহরেও পাখির আবাস্থল নষ্ট করা হয়েছে নানা উন্নয়নের নামে৷ কিন্তু একটু সচেতন হলে পাখির আবাসস্থল ঠিক রেখেও উন্নয়ন করা সম্ভব৷

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বাংলাদেশে পাখির প্রজাতির সংখ্যা ৬৫০টি৷ এর মধ্যে ৩০টি বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিলুপ্ত৷

অবশিষ্ট ৬২০টি প্রজাতির মধ্যে ৪৭৭ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যায়, বাকি ১৪৩ প্রজাতি অনিয়মিত দেখা যায়৷ নিয়মিত ৪৭৭ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশের ‘আবাসিক’ এবং ১৭৬ প্রজাতি ‘পরিযায়ী’পাখি৷