মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎ করবেনা বলে জানিয়েছেন ইরানের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসি।
শুক্রবারের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।
ইরানের ওপর থেকে আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলে তিনি বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কিনা- একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না’। রাইসি ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা লঙ্ঘন করার জন্য আমেরিকার এবং নিজেদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমেরিকাকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসতে হবে এবং ইউরোপীয়দেরকে ওয়াশিংটনের চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে ইরানের প্রতি নিজেদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
সাইয়্যেদ রাইসি তার সরকারের পররাষ্ট্রনীতি ব্যাখ্যা করে বলেন, বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ রক্ষা করা হবে এবং ইরানের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেবে তার সরকার।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে উল্লেখ করে ইব্রাহিম রাইসি বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে পূর্ণ মাত্রায় কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ও পরস্পরের দেশে দূতাবাস পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
ইহুদিবাদী ইসরাইলের ব্যাপারে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বলেন, ইরানকে ভয় না পেয়ে তেল আবিবের উচিত ফিলিস্তিনি জনগণ ও প্রতিরোধ সংগ্রামীদের ভয় করা। ফিলিস্তিনের ব্যাপারে ইরানের নীতি হচ্ছে, সেখানকার মূল অধিবাসীদের মধ্যে গণভোটের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের ভাগ্য নির্ধারণ করতে হবে।
ইয়েমেন যুদ্ধ প্রসঙ্গেও বক্তব্য রাখেন আয়াতুল্লাহ রাইসি। তিনি বলেন, সৌদি আরবকে যথাশীঘ্র সম্ভব ইয়েমেনে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে এবং সেদেশের জনগণকে বিদেশি হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে দিতে হবে।
ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বলেন, গত ১৮ জুনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইরানের মহান জাতি যথারীতি যে ইতিহাস রচনা করেছে তা ছিল জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। নির্বাচনে জনগণের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতির মধ্যে বিশ্ববাসীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছিল বলে জনাব রাইসি উল্লখ করেন।
তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারির ভেতর শত্রুদের বিচিত্র শত্রুতা, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অনুযোগ ইত্যাদি বিচিত্র প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নির্বাচনে জনগণের ওই আন্তরিক উপস্থিতি যথেষ্ট অর্থবহ।সাইয়্যেদ রাইসি বলেন, ওই উপস্থিতি ইরানের জনগণের মধ্যকার ঐক্য ও সংহতির বার্তা বহন করছে।
তিনি বলেন, বৈষম্য, দারিদ্র্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করাসহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন প্রয়োজন। এক কথায়, সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন ড. রাইসি। ইসলামি বিপ্লবের গৌরবময় মূল্যবোধের ভিত্তিতে মরহুম ইমাম ও শহীদদের পথ বিশেষ করে প্রিয় শহীদ ও জনগণের হৃদয়ের নেতা মরহুম কাসেম সোলাইমানীর আদর্শ অনুসরনের মাধ্যমে ওই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
রাইসি আরও বলেন, জনগণ সর্বোচ্চ নেতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে নির্বাচনে তাদের উপস্থিতির স্বাক্ষর রেখেছে। ত্রয়োদশ সরকারের উচিত দেশ ও জাতির দেওয়া ওই বার্তা গভীর মনোযোগ ও আন্তরিকতার সঙ্গে শোনা। জনগণকে আমরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যাপারে বিশ্বস্ত থাকতে হবে। সকল শক্তি ও আন্তরিকতা দিয়ে জনগণের সেবা করা এবং তাদের সমস্যাগুলো দূর করার ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করার ওপর জোর দেন জনাব রাইসি।
তিনি জোর বলেন, আমরা নিশ্চিত যে আল্লাহর উপর নির্ভর করে এবং ইরানের সামর্থ্য ও সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে বিশেষ করে যুবসমাজের মূল্যবান সমৃদ্ধিকে কাজে লাগানোর মধ্য দিয়ে পরিস্থিতির পরিবর্তন আনা অসম্ভব নয়।