করোনা মহামারির ভয়ঙ্কর আঘাত আর্থিক সেবাদান প্রতিষ্ঠান ব্যংকেও লেগেছে। দেশে এখন পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ মাসে ১৩৩ ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রাণ দিয়েছেন।
ব্যাংক গুলো করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে থাকলেও ব্যাংকারদের মৃত্যুর পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অর্থীক সেবা প্রদান করতে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মৃত্যু হয়েছে। এক্ষেত্রে সেবা দানে যারা মারা গিয়েছে পদবির ভিত্তিতে তাদের পরিবার গুলোকে ব্যাংকের পক্ষ থেকে এককালীন অর্থ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ২০৬ জন। আর গত মে পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ হাজার ৩৯৯ জন। অর্থাৎ ব্যাংকের জনবলের প্রায় ১৪ শতাংশই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত মে মাসে ৫৭৬ জন ব্যাংকার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ২ জন।
করোনায় মারা যাওয়া ১৩৩ কর্মকর্তার মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোরই ৭৩ জন। সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা। ব্যাংকটি করোনায় ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হারিয়েছে। আর আক্রান্তও বেশি হয়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা। গত মে পর্যন্ত ব্যাংকটির ২ হাজার ৭৯৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। জনতা ব্যাংকের ১৫ কর্মকর্তা, অগ্রণী ও কৃষি ব্যাংকের ১০ জন করে কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এরপরই আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ব্যাংকটির ২ হাজার ৪০৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন ও মারা গেছেন ৬ জন। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের ৬ জন ও ইউসিবিএলের ৫ কর্মকর্তা করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭৮৫ ও ইউসিবিএলের ৬৮৪ কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু এইচএসবিসি ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তা করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। আর আক্রান্তের দিক দিয়ে শীর্ষে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ৪৯৯ কর্মকর্তা।
করেনায় মারা গেলে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণ:
ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনায় মারা গেলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাদের পরিবারকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। কর্মচারী মারা গেলে দেওয়া হচ্ছে ২৫ লাখ টাকা। আর ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার থেকে অফিসারের নিচের পদমর্যাদার কর্মকর্তার পরিবার পাচ্ছেন ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তবে, জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুছ ছালাম আজাদ জানান, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মারা গেলে অনুদানের অর্থ পাওয়ার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত কারও পরিবার অনুদানের অর্থ পায়নি। কারণ, নথিপত্র জমা হয়নি।
এদিকে লকডাউনে ব্যাংকারদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পরিবহনের ব্যবস্থা করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বেসরকারি বেশির ভাগ ব্যাংকই তা মানছে না। আর ব্যাংক শাখাতেও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। ফলে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে।