সরকারের দুর্বলতার প্রকাশ বিরোধী দলের নেতাদের ধরপাকড় বলে দাবি করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, সরকার যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতারে লিপ্ত হয়। আমাদের গ্রেফতার করে নিজেদের গদি টেকানো সম্ভব নয় বলেও এ হুশিয়ারি দেন।
বৃহস্পতিবার জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী মহিলা দলের নাজমুন নাহার বেবী, নেওয়াজ হালিমা আরলি, ইয়াসমীন আরা হক, হেলেন জেরিন খানসহ নেতারা অংশ নেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, এই ধড়পাকড় হলো একটি বার্তা। সরকার যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন বিরোধী দলকে দুর্বল করার জন্য মানসিকভাবে, নেতাকর্মীদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে দুর্বল করার জন্য তারা মাঝে মধ্যে এ রকম হাওয়া দেবে। তবে আমরা এখন বলব একটিই কথা— সব লোক জেলে যাক, তার পরও সরকারের পতন ঠেকিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই।
বিএনপির অন্যতম জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই— আমরা আন্দোলন করছি, আমাদের আন্দোলন করার অভিজ্ঞতা আছে। আন্দোলনে শিরোপা অর্জনেরও খালেদা জিয়ার সুনাম আছে। আর আন্দোলন কখনও বৃথা যায় না। কোনো আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী, কোনো আন্দোলন হয় স্বল্পক্ষণের জন্য। বিএনপি যে আন্দোলন করতে পারে ২০১৩ সালে আন্দোলন দেখেছেন, বিএনপি আন্দোলনে করতে পারে ২০১৫ সালে দেখেছেন। সামনে এমন আন্দোলন দেখবেন আর সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ থাকবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, একমাত্র খালেদা জিয়া যিনি আদালত থেকে জামিন পান না। মার্ডার কেইসের আসামি, যাবজ্জীবন দণ্ডিত আসামি, ফাঁসির আসামিও এই আদালত থেকে জামিন পাচ্ছে, অহরহ পাচ্ছে, প্রতিদিন পাচ্ছে। সুতরাং আদালতের কাছে এমন কোনো আইন নেই যে আইনের বলে খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া যায় না। এটা আমি একদম চ্যালেঞ্জ করে বলছি। এটা একান্ত আদালতের ইচ্ছার ব্যাপার। সবার ব্যাপারে জামিন হয়, খালেদা জিয়ার জামিনের ব্যাপারে আদালতকে কেন থামিয়ে রেখে যেটি আপনাকে বুঝতে হবে, আমাকেও বুঝতে হবে। অর্থাৎ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ওপর যে খড়গ নেমেছিল তার পর সব বিচারপতিরই একটা আশঙ্কা-আতঙ্কের মধ্যে তাদের বিবেক বন্ধক, তারা আইনের বই ঘেঁটে সুষ্ঠু বিচার করার ক্ষেত্রে তাদের প্রতিবন্ধকতা আছে।
তিনি বলেন, জনগণের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নেত্রী। সুতরাং তার মুক্তি আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই হবে। এর বিকল্প আমাদের কাছে কোনো পথ খোলা নেই। হ্যাঁ আমরা চেষ্টা করছি। তবে আমার মনে হচ্ছে সেই চেষ্টা যথেষ্ট নয়। এখন একটাই চেষ্টা করা দরকার— এই সরকারের পতন। তাদের পতন হলে খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে, গণতন্ত্র মুক্তি পাবে, অন্যায়-অবিচার থেকে মানুষ মুক্তি পাবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন আমার মনে হয়, প্রতিদিন সরকারের যে দেওয়া ইস্যু, এই ইস্যু আমাদের উপেক্ষা করা ভালো, এই ইস্যুতে আমাদের কান না দেওয়া ভালো। আমাদের একটিই ইস্যু— আমরা জাস্টিস চাই, আমরা গণতন্ত্র চাই, গণতন্ত্রের বাধা কে? বর্তমান সরকার শেখ হাসিনা, তার পতনের মধ্য দিয়েই খালেদা জিয়ার মুক্তি আজকে সম্ভব। এর বাইরে অন্য কোনো পন্থায় নয়।