সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে হবে।
এর আগে রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার শুরু তারও আগে। তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় রোববার বিকেলে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। দাবি না মানা পর্যন্ত তাকে বের হতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে শিক্ষক সমিতির নেতারা এবং প্রক্টরিয়াল বডি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে আসেন। এ সময় কোষাধ্যক্ষ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বলেন, ভেতরে অবরুদ্ধ থাকায় উপাচার্য অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে বাসায় নিয়ে যেতে হবে। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় শিক্ষকদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে প্রবেশ করে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে মুক্ত করতে যায়। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেন। এর জেরে ধাক্কাধাক্কির একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করেন। তখন শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে কিছু সময়ের জন্য পুলিশ পিছু হটলেও একটু পরই টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। কয়েকজন শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও শোনা গেছে।
শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর আইআইসিটি ভবন থেকে উপাচার্যকে উদ্ধার করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভিসির নির্দেশে হামলা
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্যের নির্দেশেই তাদের ওপর হামলা হয়েছে। সাত্তার নামে ক্ষুদ্ধ এক ছাত্র বলেন, ‘পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা চালায়। ছাত্রীদের মারধর করে, গুলি ছোড়ে।’
তিনি বলেন, ‘ভিসির নির্দেশেই ওই হামলা চালানো হয়। আমরা এর বিচার চাই।’ তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলেও জানান এ শিক্ষার্থী।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘আমরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করতে গিয়েছিলাম। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করি, কিন্তু তারা আমাদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে বাধ্য হয়ে লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড এবং ৩০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে বলেও জানান তিনি।