রাকিব মোরতাজা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, জাতীয় শ্রমিক লীগ সব সময় বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করে এসেছে। শ্রমজীবি মানুষের অধিকার আদায়ে শ্রমিক লীগ সব সময় পাশে ছিলো। শ্রমিক লীগ বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের কণ্ঠস্বর।
তিনি বলেন, শ্রমিক লীগ এদেশের সব থেকে বড় জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রমজীবী মানুষের জন্য শ্রমিক লীগকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন। তাই শ্রমিক লীগ এ দেশের মানুষের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন । এ সংগঠন সব সময় তার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। ৬৯ গণঅভ্যুত্থানে এ সংগঠনের মনু মিয়া প্রথম জীবন দিয়েছে এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।
শনিবার ( ৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এর নতুন ভবনের নিচতলায় জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় শুভ উদ্বোধন কালে তিনি এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন আজ ঐতিহাসিক পাঁচই ফেব্রুয়ারি। ১৯৬৬ সালের এদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন। এই ছয় দফা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ছয় দফা মূলত স্বাধীনতার এক দফা ছিল। ছয় দফার মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বাংলাদেশ বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি জামায়াত। তারা কখনো দেশের মঙ্গল চায় না। সব সময় দেশের ক্ষতি করতে চায়। তারা সব সময় দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। এখনো তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। বিএনপি সব সময় বিদেশীদের কাছে গিয়ে ধর্না দেয়। তারা পরাশক্তির কাছে নালিশ করে। লবিষ্ট নিয়োগ করে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে । বিদেশীদের টাকা দেয় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য। অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করতে তারা বিদেশে লবিষ্ট নিয়োগ করেছে। এর আগে খালেদা জিয়াও নিবন্ধ লিখে জিএসপি সুবিধা নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। তাদের সকল ষড়যন্ত্র রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করা হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি কথায় কথায় আন্দোলনের হুমকি দেয়। আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। আমরা তাদের এ সকল হুমকিকে ভয় পাই না। আওয়ামী লীগের মূল শক্তি হলো এদেশের জনগণ। জনগণ শেখ হাসিনার সাথে আছে। আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আওয়ামী লীগ জনগণের দল। আওয়ামী লীগ সার্বভৈৗমত্ব রক্ষায় সব সময় কাজ করে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল অপরাজনীতি প্রতিহত করতে প্রস্তুত। শ্রমিক লীগ সুসংগঠিত হয়ে সকল অপশক্তি রুখে দিবে।
শ্রমিক লীগের নেতাদের উদ্দেশ্যে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, শ্রমিক লীগকে তৃণমূলে আরও শক্তিশালী করতে হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা ও জেলায় শ্রমিক সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এখন আমাদের কাজ হলো শ্রমিক লীগকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। নেতা-কর্মীদের খোজ খবর নেওয়া। দলের খারাপ সময় এসব নেতা- কর্মী আমাদের পাশে থাকে। তাদের কাছে টেনে নিতে হবে। সুবিধাবাদীদের খুঁজে বের করে সংগঠন থেকে দূরে রাখতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শ্রমিক লীগকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, শ্রমিক লীগে যাতে কোন চাঁদাবাজ ,ধান্দাবাজ ভর করতে না পারে সে দিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। শ্রমিক লীগ কোন চাঁদাবাজের সংগঠন নয়। এটি মেহনতি মানুষের সংগঠন।শ্রমিক লীগে কোন ধান্দাবাজের জায়গা নেই। শ্রমিক লীগ মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করে আসছে। এ সংগঠন আগামী দিনেও মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করবে।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, যে কোন সংগঠনের মধ্যে মতবিরোধ থাকে। পরিবারের মধ্যেও মতবিরোধ থাকে। পৃথিবীর যে কোন সমাজ ব্যবস্থায় মত পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু আমদের মনে রাখতে হবে আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা আর আগের ভুলবোঝাবুঝির জায়গায় ফিরে যেতে চাই না। আমরা শুধু সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কে এম আযম খসরুর সঞ্চালনায় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান সহ শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর সম্মেলনে শ্রমিক লীগের গঠিত কমিটির সভাপতি ও কার্যকরী সভাপতির মৃত্যুতে শ্রমিক লীগে শূন্যতা ও বিভক্তি দেখা দেয়। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মাঝে সমন্বয়ের ঘাটতিতে তা জটিল আকার ধারণ করে। এ শীর্ষ-নেতাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ ২০২২ সালের ২২ জানুয়ারি সর্বশেষ প্রকাশ্যে আসে । সেদিন শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাদের একটি অংশ বৈঠক করেন। সেখানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না। তাকে জানানোও হয়নি। বৈঠকে সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে এই দায়িত্ব দেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
২২ জানুয়ারি না জানিয়ে বৈঠক করায় এবং তাকে সরিয়ে আরেকজনকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে শুনে শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক আযম খসরু শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নানসহ কেন্দ্রীয় কমিটির চারজনকে বহিষ্কার করেন। গণমাধ্যমে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠান। এতে বলা হয়, গঠনতন্ত্র ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
সংগঠনের এমন পরিস্থিতিতে শীর্ষ দুই নেতাকে নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে জাতীয় শ্রমিক লীগের বিরাজমান সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা শ্রমিক লীগ নেতাদের সতর্ক করার পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠন পরিচালনা করার নির্দেশ দেন।
অতঃপর ৩ ফেব্রুয়ারী জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নূর কুতুব আলম মান্নানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আযম খসরুর সঞ্চালনায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খানের উপস্থিতিতে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং তাদের উপস্থিতিতে আজ ৫ ফেব্রুয়ারী শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় উদ্বোধন করা হয়।