বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়া জড়িত: হানিফ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলো। জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কর্নেল রশিদ বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছিলো, এ হত্যা কান্ডের সাথে তারা কিভাবে জড়িত ছিলো। সে বলেছিলো হত্যাকান্ডের আগে একাধিকবার তারা জিয়াউর রহমানের সাথে বৈঠক করেছিলো। জিয়াউর রহমানের সেনাবাহিনীর ২য় সর্বোচ্চ ব্যক্তি ছিল। সে বিষয়টা জেনেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। জিয়াউর রহমান তাদের বলেছিলো তোমরা এগিয়ে যাও। আমি তোমাদের পিছনে থাকবো। এটাই তো বড় প্রমান যে জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যা কান্ডে জড়িত।

১৪ ই আগষ্ট ২০২২ রবিবার বিকালে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকান্ডের পর জিয়া ইনডেমনিটি আইন করে খুনিদের রক্ষা করেছিলো। খুনিরা যাতে জিয়ার নাম না বলে এজন্যই তাদের ইনডেমনিটি দিয়েছিলো জিয়া। জিয়া যদি হত্যা কান্ডে জড়িত না থাকে তাহলে তিনি খুনিদের বিচার কেন করেননি। তাদের বিচার করতে তার কি সমস্যা ছিলো। সে উল্টো তাদের পুরস্কৃত করেছিলো।

হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ারও তখন থেকে বঙ্গবন্ধুর উপর একটা ক্ষোভ ছিলো। কারণ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছিলো। আর এরা ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়া পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলে। কর্নেল ফারুককে সংসদে বসিয়েছে বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সাথে বেইমানি করেছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ১৯৯১ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন তার জীবনেতে জন্ম তারিখ ছিলো ৫ সেপ্টেম্বর। এই খালেদা জিয়া ১৯৯৩ সালে হঠাৎ করে ১৫ আগষ্ট কেক কাটা শুরু করলো। এর কারন ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী। গোটা জাতির শোকের ও বেদনার দিন এরা আনন্দ করে, কারন বঙ্গবন্ধু এ দেশকে স্বাধীন করেছে। আর খালেদা জিয়া পাকিস্তানের পক্ষের শক্তি। সে স্বাধীনতা চায়নি। এর জন্য সে ১৫ আগষ্ট কেক কেটে আনন্দ উল্লাস করে। অথচ ১৯৮৪ সালে যখন খালেদা জিয়া বিএনপির নেত্রী হন তখন তার পিতা তৎকালীন পত্রিকা “নিপুন” এ সাক্ষাৎকারে বলেছেন ১৯৪৫ সালে যখন ২য় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হলো ৫ সেপ্টেম্বর সে দিন খালেদা জিয়া জন্ম গ্রহণ করেছিলো।তখন হসপিটালের ডাক্তার বলেছিলো আজ বিশ্বে একটা শান্তি আসবে। তাই আপনার মেয়ের নাম শান্তি রাখেন।কিন্তু তার পিতা ইস্কান্দার সাহেব ভাবলেন শান্তি নাম টা হিন্দু নাম। তাই তিনি খালেদা খানম রেখেছেন। এতেই বুঝা যায় তার জন্ম ৫ সেপ্টেম্বর। আর এ খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীতে উল্লাস করে কেক কাটে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। সে যুদ্ধ করেছে কিনা আমরা জানি না। খালেদা জিয়া তখন ছিলো ঢাকা ক্যন্টনমেন্টে।জিয়াউর রহমান অনেক বার লোক পাঠানোর পরও সে জিয়ার কাছে যায়নি। স্বাধীনতার পর যখন দেশ স্বাধীন হয়েছিলো তখন জিয়াউর রহমান আর খালেদা জিয়াকে নিবে না। কারন খালেদার প্রতি জিয়ার অবিশ্বাস, সন্দেহ ও ঘৃণা চলে এসেছিলো। তখন খালেদা জিয়ে বঙ্গমাতার কাছে কান্না কাটি করেছিলো। বঙ্গবন্ধু জিয়াউর রহমানকে ডেকে বলেছিলো খালেদা আমার মেয়ের মতো।আমি বলছি তুমি তাকে ঘরে নিয়ে যাও। তখন বঙ্গবন্ধুর চাপে বাধ্য হয়ে জিয়াউর রহমান খালেদাকে ঘরে তোলে।বঙ্গবন্ধু কারনে খালেদা জিয়ার সংসার টিকে যায়। আর সেই খালেদা জিয়া তার শাহাদাত বার্ষিকীতে জন্মদিন পালন করে।

আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিলেন এবং তার ১৯ মিনিটের ভাষন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষন গুলোর মধ্যে একটা। যা জাতিসংঘ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ভাষনটি সমস্ত শ্রেষ্ঠ ভাষনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এ ভাষনে বঙ্গবন্ধু যে আবেগ দিয়ে মানুষের অধিকারের কথা তুলে ধরেছেন, পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতন ও নিপিড়নের কথা বলেছেন এবং আমাদের বলেছেন যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে। সে দিন তার কথায় সকল মানুষ যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে দেশের স্বাধীনতা আর্জন করে। উনি যে কিভাবে মানুষ কে মোটিভেশন করতে পারতেন তখন যারা ছিল তারা দেখেছে।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন বলেই তিনি আমাদের জাতির পিতা।আমাদের দেশে ধর্ম ব্যবসায়ী জামাতে ইসলামি বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মানে না। একবার আমি ইমামদের একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছি আপনারা বঙ্গবন্ধুকে কেন জাতির পিতা হিসাবে মানেন না। তারা বলল মুসলমানদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)। আমি তাদের বললাম পাকিস্তানের আমলে আপনারা মোহাম্মদ আলী জিন্নাকে জাতির পিতা মানতেতো কোন অস্বীকার করেননি। এখন কেন বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মানতে আপনাদের সমস্যা। এরা হলো স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার। মুসলিম বিশ্বের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কিন্তু বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি এ রাষ্ট্র কে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর জন্যই আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধু পরিচয় দিয়ে গেছেন। যতদিন এ বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা হিসেবে থাকবেন।

আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৯৭১ সালের ১৫ আগষ্ট ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম দিন।বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। তাকে হত্যা করলো ক্ষমতা দখলের জন্য কিন্তু বঙ্গমাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যের কি অপরাধ ছিলো। তাদের কেন হত্যা করা হলো। খুনিরা শিশু রাসেলকেও ছাড়েনি। মায়ের কাছে নেওয়ার কথা বলে নির্মম ভাবে হত্যা করে। কত বড় পিশাচ হলে এমন কাজ করতে পারে। এ হত্যা কান্ডের ৪৭ বছর আমরা পার করছি এবং এর বিচার আমরা করেছি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকান্ডের পিছনে যারা রয়েছে তাদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া দরকার। এদের পিছনে মদদদাতা ও পরিকল্পনাকারী রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে তারা একটা জাতিকে হত্যা করলো। এর জন্যই কি আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা চেয়েছি এ দেশ হবে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ। একটি উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। বঙ্গবন্ধু যদি আজ জীবিত থাকতো তাহলে বাংলাদেশ আরো বেশি উন্নত দেশ হতো। বঙ্গবন্ধু একজন দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতা ছিলেন। বাংলাদেশকে নিয়ে তার স্বপ্ন ছিলো অনেক।বঙ্গবন্ধুকে সারা বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধা করতো। বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র প্রধানরা তাকে সন্মান করতো। ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, আমি হিমালয় দেখিনি, আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। যার ব্যক্তিত্ব ও সাহস হিমালয়ের মতো।

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের মহাসচিব কে এম শহিদ উল্লার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। আরও উপস্থিত ছিলেন শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের সাংগঠনিক সচিব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন সহ শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও শতাধিক শিশু কিশোর।