জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলো জেলা আ.লীগ

বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাত ৮টায় পৌর সুপার মার্কেটের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির।

তিনি বলেন, লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কোনো কাউন্সিল ছাড়া বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি দিয়েছে। এ কমিটিকে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ কেউ সহায়তা করবে না। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বাদ দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে। এ কমিটি বাতিল করতে হবে। ‌নতুন পদ পাওয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। নতুন কমিটিকে আমরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলাম।

একই সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু তার বক্তব্যে বলেন, কালকের ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমাদের ছেলেদের কোনো দোষ ছিল না। তবু নির্বিচারে পেটানো হয়েছে তাদের। মহরম আলীর নেতৃত্বে পুলিশ এমন জঘন্য কাণ্ড ঘটিয়েছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই। এ ঘটনায় যারা আহত হয়েছে, তাদের চিকিৎসার সব ভার বহন করবে জেলা আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে নিজ হাতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তার এ অগ্রযাত্রায় বাধা দিতে কুচক্রীরা এখনও সক্রিয়।

বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে জেলা ছাত্রলীগকে অবাঞ্ছিত করার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা জেলার ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মানিত নেতাদের এমন কোনো বক্তব্য আমাদের চোখে আসেনি।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন বিদ্যুৎ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের এমন কোন বক্তব্য আমাদের নজরে আসেনি। আজ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। আমি সেই তদন্ত কমিটির প্রধান। আমরা তদন্ত করে সার্বিক সব বিষয় তুলে ধরব। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ একটি পরিবার। আমরা বিষয়টি দেখছি।

১৫ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে ফুল দিতে যান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা ও সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান ইমরান।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত গ্রুপের সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আহত হন শতাধিক।

এ ঘটনায় আজ (মঙ্গলবার) আলোচিত এএসপি মহরম আলীকে প্রত্যাহার করে বরিশাল ডিআইজির কার্যালয়ে নেওয়া হয়। বিকেলে সংঘর্ষের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদ। এ ছাড়া মহরম আলীর বরখাস্তের দাবিতে রাত আটটায় বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন। পরে পুলিশ কর্মকর্তা মহরম আলীর কুশপুতুল জ্বালানো হয়।

আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলনায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন। এতে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই নতুন কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।