রাজনৈতিক উত্থানের গোড়ার দিকের কথা। তখন ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী। এরপর রাজশাহী কলেজ মুসলিম হল শাখা ছাত্রদলের ৬ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক হন ২০১৬ সালে। পরে এই কমিটি বিলুপ্ত হয়। তবে ২০১৯ সালের দিকে ছাত্রদলের কমিটিতে থাকা অবস্থাতেই তিনি ঢাকায় গিয়ে ছাত্রলীগ নেতা হওয়ার জন্য তদবির শুরু করেন।
এক সময় বনে যান- রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। অনেকটা এভাবেই শর্টকাট পথে শিবির, ছাত্রদল চষে খেয়ে ছাত্রলীগের বড় নেতা হয়েছেন বর্তমান সময়ের সর্বমহলে সমালোচিত উঠতি রাজনৈতিক নেতা সাকিবুল ইসলাম রানা। আর তার এই উত্থানের পেছনে রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতির পরিবারের স্নেহ।
অভিযোগ রয়েছে, রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার আগে ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়ের বাড়ির বাজার করা থেকে শুরু করে সব ধরনের ফুটফরমায়েশ খাটাসহ ছোট-বড় সব কাজই করে দিতেন এই রানা। যে কারণে জয়ের মা-বাবার আদর-স্নেহে ভাসেন রানা। অনেকটা মায়ের আবদারেই সাকিবুল ইসলাম রানাকে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বানান জয়। ওই সময় রানার এই নতুন নেতৃত্ব তৈরির জন্য সরকারের একজন প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রীরও সুপারিশ এবং সমর্থন ছিল।
নানা সমালোচিত ঘটনার জন্ম দেওয়ার কারণে এখন নতুন করে আবারও আলোচনায় উঠে এসেছেন এই জেলা ছাত্রলীগ নেতা। নারীর সঙ্গে অশ্নীল ভিডিও ভাইরাল, অনৈতিক প্রস্তাব, মদ্যপ অবস্থায় মহানগরীতে মাতলামি করার সময় এলাকাবাসীর পিটুনি খাওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। হালে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলাম রানার একটি অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। এরপর তার অপরাধনামা আবারও চাউর হয়েছে।
রানার ফাঁস হওয়া চার মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ওই অডিওতে শোনা যায়- এক ছাত্রলীগ নেত্রীকে তার কাছে ‘মেয়ে’ পাঠানোর কথা বলছেন তিনি।
ওই অডিওতে রানাকে বলতে শোনা যায়- ‘তুমি আমার সাথে নাটক করিচ্ছো তাই না?’ মেয়েটি তাকে বলেন, ‘কিসের নাটক ভাইয়া?’ রানা বলেন, ‘তোমার কথা-কাজে মিল পাচ্ছি না। চিটারি করতে পারবা না। বহুত বড় চিটারি-বাটপারি কইরি আমি প্রেসিডেন্ট হইছি। সব চিটারের দলের সর্দার আমি। তুমি না হয়, আসতে চায়া আসলে না, কাকে যে পাঠাতে চাইলে সে কই? একজনের সাথে কইরি তুমি যদি বড় নেত্রী হও, সেটা মানুষ মাইনি লিতে পারে না, তুমি বুঝ না?’ তখন ওই ছাত্রলীগ নেত্রী তাকে বলেন, ‘এগুলো তো ভাইয়া অবান্তর কথা, আর আমার ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দরকার নাই। আমি যথেষ্ট ভালো আছি। সংগঠনটাকে ভালোবেসেই আসছিলাম। ’
তখন রানা বলেন, ‘তাহলে শোনো ঠিক আছে আর শান্ত-মান্তর কোনো বেল নাই। ’ ওই মেয়েটি বলেন, ‘তো ভাইয়া আপনি মেয়ের কথা কালকে বলছিলেন, তো আমি ছবি পাঠাইছিলাম। ’ রানা বলেন, ‘দেখ দেখ পাঠাতে পারো নাকি?’ ওই নেত্রী বলেন, ‘উনিও তো ফ্যামিলির সঙ্গে থাকে। ’ রানা তখন বলেন- ‘এখন আটটা বাজে। কী এমন রাত? দেখ দেখ ফোন দাও। পাঠাও। কেউ যেন না জানে। ’ মেয়েটি তাকে বলেন, ‘কে জানবে, আপনি আমাকে ভরসা করতে পারেন। ’
এর আগেও এক নারীর সঙ্গে রানার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এছাড়া গেল কয়েক দিন আগে তার একটি পুরোনো ছবিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গেই রয়েছেন সাকিবুল ইসলাম রানা।
যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে এখন মুখ খুলতে নারাজ কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে রানার দাবি এগুলো সবই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। আর তাদের দলের ভেতরের মানুষই এসব ষড়যন্ত্র করছে। জয় ও তার পরিবারের সঙ্গে তার খুবই ভালো সম্পর্ক। রানা যখন জয়কে মেইনটেন করতেন তখন তিনি কেন্দ্রের সভাপতি হননি, নেতাও ছিলেন না। তখন থেকেই জয়ের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। জয় ও তার মা রানাকে অনেক স্নেহ করেন। এর বেশি কিছু নয়।