বিএনপির পালানোর ইতিহাস রয়েছে: তথ্যমন্ত্রী

‘আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাবে’ বিএনপি নেতাদের এমন মন্তব্যের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পালানোর ইতিহাস তো বিএনপির। তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আর রাজনীতি করবেন না এই মুচলেকা দিয়ে বিদেশ চলে গেছেন। এবং তার সঙ্গে আরও অনেকেই পালিয়ে গেছেন।

শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সংসদের (বাচসাস) নতুন কমিটির অভিষেক ও গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, আজ শুধু সরকারে নয়, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষকসহ দেশের সব পেশার মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আগের তুলনায় অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছে। সেকারণেই বিএনপির গাত্রদাহ, কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। যে দলের মহাসচিব বলে পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল, তারা কোন চেতনায় বিশ্বাস করে তা সহজেই অনুমেয়। তারা আসলে পাকিস্তানের পক্ষে।

বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকার ও জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করা থেকে বিএনপি যদি বিরত থাকে তাহলে তাদের সভা-সমাবেশ নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। সরকার এক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করছে এবং সেই কারণেই তারা সমাবেশ করতে পারছে।

‘আর আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছুড়ে হামলা করা হয়েছিল, ২৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা বিরোধী দল থাকাকালে আওয়ামী লীগ অফিসের দুপাশে কাঁটা তারের স্থায়ী বেড়া ছিল, তার বাইরে আমাদের যেতে দেওয়া হতো না। তখন শেখ হেলাল এমপিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার জনসভায় হামলা করে কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছিল। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জনসভায় হামলা করা হয়েছিল, এস এম কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারের জনসভায় হামলা করে তাদের হত্যা করা হয়েছিল। এভাবে আমরা বিরোধী দলে থাকতে আমাদের শতশত নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বিএনপির সমাবেশে তো বোমা বা গ্রেনেড দূরে থাক, একটি পটকাও তো ফোটে নি।

এর আগে বক্তৃতায় বাচসাসের নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে তারা তাদের লেখনী ও চিত্রের মাধ্যমে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।

ড. হাছান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন সংস্কৃতিমনা মানুষ। বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রায় ২০০ সিনেমা হল আবার চালু হয়েছে শুনে তিনি অত্যন্ত উৎসাহিত হয়েছেন এবং আমাকে বলেছেন সবাইকে আরও সিনেমা হল নির্মাণের জন্য বলতে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নতুন সিনেপ্লেক্স, সিনেমা হল নির্মাণ ও পুরোনো হল সংস্কারের জন্য ১ হাজার কোটি টাকার সহজ ঋণ তহবিল গঠিত হয়েছে। কেউ যদি মার্কেটে সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করতে চায় তাহলে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবে। ব্যাংকগুলোকেও আমরা ঋণ দিতে উদ্বুদ্ধ করব।

আমাদের সিনেমা শুধু দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, খুব সহসাই বিশ্ব অঙ্গনে আরও ভালো জায়গা করে নেবে, আশাপ্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী।

বাচসাস সভাপতি রাজু আলীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মোল্লা জালাল, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, একুশে পদকপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী পাভেল রহমান, চিত্রনায়ক ওমর সানী ও বাচসাস সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ।

এ দিন বাচসাস সম্মাননা-২০২২ এ ভূষিত হন সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য রাবেয়া খাতুন (মরণোত্তর), সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক (মরণোত্তর), একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ার (মরণোত্তর), বরেণ্য সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী (মরণোত্তর), সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন ইউসুফ, সাংস্কৃতিক জাগরণে অনবদ্য অবদানের জন্য লিয়াকত আলী লাকী, সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানে আনিসুল হক, নাটক ও চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানে মাসুম রেজা, একুশে পদকপ্রাপ্ত ফটো সাংবাদিক ও বাচসাস সদস্য পাভেল রহমান, চলচ্চিত্র শিল্প ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের জন্য চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।

এছাড়া টিভি সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য মোজাম্মেল বাবু, চলচ্চিত্র প্রযোজনায় বিশেষ অবদানে হাবিবুর রহমান খান, হাসিনা: এ ডটার’স টেল চলচ্চিত্রের জন্য পিপলু আর খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, বরেণ্য সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শেখ সাদী খান, চারুশিল্পী, অভিনয় ও নির্দেশনায় আফজাল হোসেন, চলচ্চিত্র শিল্পে অবদান রাখার জন্য চিত্রনায়ক শাকিব খান ও সংগীতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী কোনাল ও ইমরান মাহমুদুল।