বাংলাদেশ পুলিশের ১৫ হাজার ৫৬১ জন নারী সদস্য শুধু একটি সংখ্যা নয়, এটি জনবান্ধব পুলিশিং, সেবা ও আস্থার এক সম্মিলিত উচ্চারণ বলে উল্লেখ করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
আইজিপি বলেন, নারী পুলিশের সাহসী ও সক্রিয় ভূমিকা দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে এবং নারী ও শিশুর নিরাপত্তাবোধ তৈরিসহ মানবাধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যদের প্রতি অধিক জনপ্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে আয়োজিত নারী পুলিশের গৌরবময় যাত্রা ও অর্জন ১৯৭৪-২০২২ শীর্ষক বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন আইজিপি। বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়।
আইজিপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের উন্নয়নে নারীদের সমান অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের আবশ্যকতা উপলব্ধি করেই ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশে প্রথম ১৪ নারী সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে এক নবযাত্রার সূচনা করেছিলেন। পরবর্তীতে জাতির পিতার সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহে ১৯৯৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে পুলিশে নারী সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বর্তমানে মোট পুলিশ সদস্যের শতকরা ৮ দশমিক ১৯ ভাগ।
তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে প্রথম মুন্সিগঞ্জ জেলায় একজন নারী পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়ন করেন। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে রাঙামাটি, চাঁদপুর, নরসিংদী, ঝালকাঠি, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ জেলায় নারী পুলিশ সুপার পদায়িত হয়েছিল। বর্তমানে ২টি জেলায় (নড়াইল, গোপালগঞ্জ) নারী পুলিশ সুপার কর্মরত আছেন।
পুলিশপ্রধান আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন) ২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক পদযাত্রা শুরু করে। নারী পুলিশের দক্ষতা ও পারদর্শিতা বৃদ্ধি, যোগাযোগ ও মিথষ্ক্রিয়ায় সবাইকে একটি নেটওয়ার্কে সংযুক্তির মাধ্যমে পেশাদারত্ব অর্জন ও নিজেদের প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি ও নেতৃত্বের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক (বিপিডব্লিউএন)। আজ এই বার্ষিক সম্মেলনে প্রদর্শিত ডকুমেন্টারিতে বিপিডব্লিউএন ও বাংলাদেশের নারী পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে যে চিত্র তুলে ধরেছে, তা আমাদের গর্বিত করেছে।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বাংলাদেশের পুলিশের কনস্টেবল থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নারী পর্যায়ের সকল পুলিশ সদস্যদের ‘জেন্ডার রেসপন্সিভ পুলিশিং’ অনলাইন মডিউল কার্যকর হলে পুলিশ সদস্যদের এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য জেন্ডার প্যারিটি ও সচেতনতা আরও সুদৃঢ় হবে বলে আমি আশা করছি।
দুই দিনব্যাপী বিপিডব্লিউএন-এর বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলন-২০২২ এ বাংলাদেশ পুলিশের পেশাদারত্ব, নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা, ড্রেস রুলস ও ক্যারিয়ার প্ল্যান; সাইবার অপরাধ: কেস অ্যানালাইসিস নারীর জন্য সচেতনতা সৃষ্টি, সংবেদনশীল সেবা প্রদান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার উন্নয়ন; মাঠ পর্যায়ের পুলিশিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয়; নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও রূপকল্প ২০৪১; নারীর ক্ষমতায়নে প্রাইভেট ও পাবলিক ওনারশিপ এবং উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট পার্সপেক্টিভ বাংলাদেশ পুলিশ; জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নারী পুলিশের অবদান ও সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায় করণীয়; স্বাস্থ্য সচেতনতা ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয় আলোচিত হবে।
বাংলাদেশ উইমেন পুলিশ নেটওয়ার্কের (বিপিডব্লিউএন) সভাপতি ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিআইজি (প্রটেকশন অ্যান্ড প্রটোকল) আমেনা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান প্রমুখ।