যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিএনপির যা চাওয়া সেটা পায়নি : ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ষড়যন্ত্রের গন্ধ সব ব্যাপারে বলতে চাই না। এখন বিএনপির কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কারণ, তারা বলেছিল নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হলে পাঁচদিনও টিকবে না। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যা চায়, সেই চাওয়াটা পাওয়া হয়নি। তারা শুনতে চেয়েছিল সরকারের ওপরে নিষেধাজ্ঞা আসবে।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে য়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতাদের মিথ্যাচারের ভাঙা রেকর্ড শুনতে শুনতে কান ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। এখন তাদের গলার জোর একটু কমে গেছে। মুখে বিষটা আরও উগ্রো হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থতা, নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে না আসার ব্যর্থতা। তাদের নেতিবাচক মানসিকতা সরকারের ওপরে চাপাচ্ছে। যা বাস্তবে দেখি না।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, যা হয়নি সেটা আবারও হবে। আমেরিকা ফিরে গিয়ে কি বলবে এ নিয়ে স্পেকুলেশনের কোনো প্রয়োজনীয়তা কি আমাদের আছে? আমরা বুঝব কী বলে গেছেন? আবার আমেরিকায় গিয়ে কি বলবেন সেসব নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কোনো প্রয়োজন তো আমাদের নেই। দেখুন, একটা কথা বলে রাখি আমরা বিদেশি বন্ধুর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাই, বন্ধুর পরিবর্তে যারা প্রভুর ভূমিকায় আসতে চান সে প্রভুর দাসত্ব আমরা মানি না। এটাই আমাদের পররাষ্ট্রনীতি।

বিএনপির সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দল বৈঠক করলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে করেনি, এটাকে কোনো সংকট মনে করছেন কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো সংকটের কথা বলেনি, কেন বলবে? বিএনপির সঙ্গে তারা বৈঠক করেছে, সেটা নির্বাচনের আগে একটা পরিস্থিতি ছিল। তখন এই বৈঠক সরকারি দল, বিরোধী দল সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে করার দরকার ছিল। এখন তারা মূলত এসেছে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে। তাদের (বিএনপি) সঙ্গে একটা বৈঠক করেছে, তাদের মতামত বা পরিস্থিতি সম্পর্কে কি ওপিনিয়ন, তাদের কি ভিউজ সেটা জানাটা তারা (মার্কিন প্রতিনিধি দল) যৌক্তিক মনে করেছে। সে কারণে বৈঠক করেছে। তারা তো আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তিনি তো আমাদের দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন, কাজেই এখানে কোনো ঘাটতি আছে, এটা আমরা মনে করছি না।

গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ ৩০০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হবে, এ নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঋণ পরিশোধ করতে হবে। বিশ্ব সংকটের কারণে সারা দুনিয়াতেই এখন অর্থ সংকট প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। এসময়ে ঋণ আগের তুলনায় বাড়তে পারে কিন্তু বাংলাদেশ এ যাবত ঋণখেলাপি হওয়ার কোনো রেকর্ড রাখেনি। আমরা সে ব্যবস্থা করছি। আমরা ঋণখেলাপি থাকব না, এটুকু বলতে পারি।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে যেতে পারে এমন আশঙ্কা আছে কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের দেশের জনগণ প্রমাণ করেছে তারা এত উসকানি, এত আন্দোলন যে বাংলাদেশ উত্তাল সাগর হয়ে যাবে– এসবের পরও তাদের ওই পিকনিক পার্টি সমাবেশে জনগণ প্রলুব্ধ হয়নি, প্ররোচিতও হয়নি। দেশের জনগণ সারা বিশ্বের খবর রাখে। সারা বিশ্বের সব খবর নিয়ে গ্রামে চায়ের দোকানে রীতিমতো গবেষণা হয়। মানুষ বুঝে এখানে সরকারের দোষ নেই। বিশ্বে যে সংকট দ্রব্যমূল্য নিয়ে সে দ্রব্যমূল্য বাংলাদেশের একার নয় সমস্যা নয়। সারা দুনিয়াতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। পৃথিবীর একটা দেশ দেখান যেখানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় আছে। তবে আমাদের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা এখনো আছে। আমরা আশা করি সামনের রমজানেও জিনিসপত্র অ্যাভেইলেবল থাকবে।

চাঁদাবাজির কারণে গরুর মাংসের দাম বাড়ছে– এমন অভিযোগের বিষয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, চাঁদাবাজির একটা বিষয় অবশ্যই আছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠিন বক্তব্য রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। একটা বিষয় শুরু হলে রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাবে এমন তো ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী বলার পর সবাই নড়েচড়ে বসেছেন। যার যে দায়িত্ব আছে পালন করার জন্য, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করার জন্য সবাই সবার তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। অর্থনীতিতে যখন সংকট হবে তখন দ্রব্যমূল্য, বাজার ওঠানামা করে। ওঠানামা করে এটা বাজারের ধর্ম। অপেক্ষা করেন, আপনাদের তো না খাইয়ে রাখেনি, দেশের মানুষ খেতে পারছে। একটা মানুষও না খেয়ে মরেনি। দেশের মানুষ অনেক ভালো আছে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাপা, উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ।