এবার চামড়া বেচাকেনায় বর্গফুট মাপার বিষয় থাকছে না: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

এবার চামড়া বেচাকেনায় বর্গফুট মাপার কোনো বিষয় থাকছে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো দেশে প্রতিপিস লবণযুক্ত কোরবানির গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

সেটা একটা সাহসী পদক্ষেপ। এবার ঢাকায় একটি ফ্রেশ গরুর চামড়ার ন্যূনতম দাম এক হাজার ২০০ টাকা। ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সোমবার (৩ জুন) দুপুরে সচিবালয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আহসানুল ইসলাম টিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহা উপলক্ষে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাবিষয়ক সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নতুন মূল্য ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন।

প্রতিপিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করার বিষয়ে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, প্রান্তিক বিশেষ করে মফস্বলে যারা কোরবানি দেন তারা চামড়া সম্পর্কে তেমন ভালো জানেন না। যারা ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে তাদের নলেজটা অনেক বেশি থাকে। অনেকে স্কয়ার ফিট বোঝে না। ছোট যে গরু কোরবানি হয়, আমি উনাদের জিজ্ঞাসা করেছি, ওনারা বলেছেন আনুমানিক ১৮ থেকে ২০ স্কয়ার ফিট চামড়া হয়। এবার আমরা প্রতি বর্গফুটের পাশাপাশি লবণযুক্ত ছোট প্রতিপিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করতে বলেছি। প্রথমবারের মতো দেশে প্রতিপিস কোরবানির গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। গরুর চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা। ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কোরবানি হলো একটি ত্যাগ। এটা কোনো ব্যবসা না। আমি মনে করি যে দামটা নির্ধারণ করা হলো। ঢাকায় সর্বনিম্ন একটি গরুর চামড়া এক হাজার ২০০ টাকা। ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটা একটা সাহসী পদক্ষেপ। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাম দেখেছি। এবার আর বর্গফুট মাপার কোনো ঝামেলা থাকছে না। এবার একটি ফ্রেশ গরুর চামড়ার দাম ন্যূনতম এক হাজার ২০০ টাকা।

চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হলেও সিন্ডিকেটের জন্য সে দামে চামড়া কেনাবেচা হয় না, সে বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ বিষয়টি সব সময় মনিটরিংয়ে রাখবে। এছাড়া বিভিন্ন এজেন্সির লোক এখানে কাজ করে। এটার ওপর সরকারের ভাবমূর্তি নির্ভর করে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আজ যে মূল্য বা দাম নির্ধারণ করা হলো সেটার নিচে যেন বাংলাদেশের কোথাও চামড়া বিক্রি না হয়। সে বিষয়টি আমরা নজরে রাখবো।

এ বছর লবণের উৎপাদন ভালো হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এ বছর লবণের উৎপাদন খুব বা অত্যন্ত ভালো হয়েছে। এছাড়া ট্যানারি ও চামড়া ব্যবসায়ীসহ ইসলামী ফাউন্ডেশনের সঙ্গে গিয়ে খুতবা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আমাদের বিপিসি আছে তাদের মাধ্যমে মাদরাসার যে ছাত্ররা কোরবানি দেয় তাদের পশু কোরবানি থেকে চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ পর্যন্ত আমাদের একটি প্রশিক্ষণ চলছে এবং চলতে থাকবে।

এ বছর চামড়া কেনাবেচা মসজিদ-মাদরাসাভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়ে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, যাতে লবণ দিয়ে সহজে চামড়াটা সংরক্ষণ করতে পারি। যেহেতু এটা একটি ত্যাগের জিনিস সবার মন-মানসিকতা যদি একই রকম থাকে তাহলে আমার মনে হয় চামড়া নিয়ে এ বছর কোনো বিতর্ক হবে না। সবাই ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যবসায়িক দিক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা মনে করেছি চামড়া সরকারের সম্পদ, সেটা সংরক্ষণ করা দরকার।

ব্যাংক লোন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন, ব্যাংক ঋণের বিষয় মূলত ব্যাংক ও গ্রাহকের সমঝোতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে। ব্যাংক যাকে যোগ্য মনে করবে সে গ্রাহক ঋণ পাবে। তবে আমরা হয়তো কয়েক বছর ধরে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে একটি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে থাকি যে কোরবানি ঈদে তারা কত টাকা ঋণ বিতরণ করতে পারবে এবং প্রস্তুতি কতটা আছে। কয়েকটি ব্যাংক বলেছে তারা প্রস্তুতি নিয়েছে আবার কয়েকটি ব্যাংক বলেছে যদি ভালো গ্রাহক পায় তাহলে তারা ঋণ দেবে। মোটামুটি ২০২৪ সালে ২৭৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এ সময় বাণিজ্য সচিব মোহা. সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ, বাংলাদেশ ফিনিসড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।