ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেসের নেতা জওহরলাল নেহরুর পর টানা তিন মেয়াদে এ পদে শপথ নিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা নরেন্দ্র মোদী। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাকে শপথ পড়ান দ্রৌপদী মুর্মু।
উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদী এবার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হলেন। কেননা, তার দল বিজেপি ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ভারতে সরকার গঠনে লোকসভার ৫৪৩ আসন থেকে ২৭২টিতে জয় পেতে হয়। বিজেপি পেয়েছে ২৪০ আসন। দলটির নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেয়েছে ২৯২। অন্যান্য শরিকদলগুলো মোদীকে সরকার গঠনের আহ্বান জানানোয় তার এ পদে শপথ নিতে কোনো বাধা পেতে হয়নি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, রোববার সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও শপথ নিয়েছেন ৭২ জন মন্ত্রী। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ৩০ জন, স্বতন্ত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচজন এবং ৩৬ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন তা পরে ঘোষণা করা হবে।
যে ৩০ জন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তারা হলেন- রাজনাথ সিং, অমিত শাহ, নীতিন গড়করি, জেপি নাড্ডা, শিবরাজ সিং চৌহান, নির্মলা সীতারমণ, এস জয়শঙ্কর, মনোহর লাল খট্টর, এইচডি কুমারস্বামী, পীযূষ গয়াল, ধর্মেন্দ্র প্রধান, জিতন রাম মাঞ্জি, রাজীব রঞ্জন সিং ওরফে লালন সিং, সর্বানন্দ সোনোয়াল, ডা. বীরেন্দ্র কুমার, কিঞ্জরাপু রাম মোহন নাইডু, প্রহ্লাদ জোশী, জুয়াল ওরাম, গিরিরাজ সিং, অশ্বিনী বৈষ্ণব, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, ভূপেন্দর যাদব ও গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর মাধ্যমে জানা গেছে, নতুন এ মন্ত্রিসভা কেমন হবে সেটি নির্ধারণের বিজেপি ও এনডিএ জোটের জাঁদরেল নেতারা দীর্ঘ সময় বৈঠক করেছেন। টানা ১১ ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেছে বিজেপি ও এনডিএ। এটি অনুষ্ঠিত হয় শনিবার নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দলের সভাপতি জেপি নাড্ডা ও জাতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, অর্থ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পদগুলো বিজেপি নিজের কাছেই রাখছে। ধারণা করা হচ্ছে, অমিত শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, রাজনাথ সিং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও নীতিন গড়করি সড়ক ও জনপথমন্ত্রী হিসেবে নিজেদের পদ ধরে রাখবেন। রাজ্যসভার সংসদ সদস্য নির্মলা সীতারমণ ও ড. এস জয়শঙ্করের পদও পরিবর্তন হবে না, এমন ইঙ্গিত মিলেছে।
মোদীর নতুন মন্ত্রিসভায় তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) থেকে চারজন মন্ত্রী পদে ‘দিল্লি মসনদের’ পাশে বসবেন। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তিনি এনডিএ জোটের শীর্ষ নেতা। তার সঙ্গে সংযুক্ত জনতা দল (জেডিইউ) থেকে দুজন মন্ত্রী হতে পারেন। আলোচিত এ দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন নীতিশ কুমার। ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন শেষে যখন ফলাফল প্রকাশ হচ্ছিল, বিশ্লেষকরা তাদের ভারতীয় শাসন পরিবর্তনের ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে দেখছিলেন। জল্পনা-কল্পনাও তেমন শুরু হয়েছিল। কিন্তু সব শেষে এ দুই শীর্ষ রাজনৈতিব এনডিএর হয়ে বিজেপিকেই সমর্থন দিয়েছেন।
এনডিএ জোট শরিকদের মধ্যে হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চার জিতন রাম মাঞ্জি মন্ত্রী হতে পারেন। মন্ত্রিত্ব পেতে পারেন রাষ্ট্রীয় লোক দলের (আরএলডি) জয়ন্ত চৌধুরী, জনতা দলের (সেক্যুলার) এইচডি কুমরাস্বামী, আপনা দলের (সোনেলাল) অনুপ্রিয়া প্যাটেল ও লোক জনশক্তি পার্টির (রাম বিলাস) চিরাগ পাসওয়ান, বিজেপির দীর্ঘদিনের মিত্র রিপাবলিক পার্টি অব ইন্ডিয়ার (এ) প্রধান ও রাজ্যসভার এমপি রামদাস আটওয়াল, একথান শিন্ডের শিব সেনা দলের এমপি প্রতাপরাও যাদবও মন্ত্রী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্ত্রী পদ পেতে পারেন বিজেপি পশ্চিম দিল্লির এমপি কমলজিৎ সেহরাওয়াত, মধ্যপ্রদেশের নেতা শিবরাজ সিং চৌহান ও জ্যোতিরাদিত্য মাধবরাও সিন্ধিয়া এবং হরিয়ানার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খাত্তার। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল থেকে বিজেপি নেতা সর্বানন্দ সোনোয়াল ও কিরেন রিজিজুও মন্ত্রী হবেন বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
বিজেপির শীর্ষ পদের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলেছে, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজেপি নিজেদের হাত থেকে যেতে দেবে না, এ বিষয়টি নির্বাচনের পর থেকেই আলোচনা হয়ে আসছিল। আর ভারতের সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক উন্নতি করায় নীতিন গড়করিই এ মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন, সেটা প্রায় নিশ্চিত।