করোনা পরিস্থিতির অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় জনসাধারণে প্রতিরোধ টিকা গ্রহণের আগ্রহ বেড়েছে তীব্র ভাবে। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইনে উপচে পড়া ভীড় দেখা গিয়েছে। অপেক্ষায় থেকেও অনেকে টিকা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাওয়ার পরই টিকা নেওয়ার নিয়ম। তবে বেশির ভাগ মানুষ নিবন্ধন করেই টিকা নিতে কেন্দ্র গেছেন। তাদের মধ্যে যারা ক্ষুদেবার্তা পাননি তাদের টিকা দেওয়া হয়নি। অনেক হাসপাতাল কম চাহিদা দেওয়ায় সকালেই তাদের টিকার মজুদ শেষ হয়ে যায়। ফলে ক্ষুদেবার্তা নিয়ে যাওয়ার পরও অনেককে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। আজ (মঙ্গলবার) তাদের কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রাজধানীর রাজারবাগ নিবাসী একজন বলেন, তিনি আগেই নিবন্ধন করেছিলেন। খুদেবার্তা পাওয়ার পর সোমবার সকাল ৮টার দিকে নির্ধারিত হাসপাতাল কেন্দ্রে যান। কিন্তু বেলা ১০টার দিকে ওই কেন্দ্রের টিকা শেষ হয়ে যায় বলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এতে তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে টিকা নেওয়ার পর অপর একজন জানান, সেখানে টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ক্ষুদেবার্তা পাননি এমন কাউকে টিকা দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভেনশন সেন্টারের টিকাকেন্দ্রে বেশ ভিড় লক্ষ করা গেছে। অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় টিকা কেন্দ্রে মানুষের ভিড় ছিল লক্ষণীয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, রোববার রাজধানীর ৪১টি প্রতিষ্ঠানে ১২ হাজার ৭৯৯ জনকে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হয়েছে। এই দিনে সারা দেশে ৪৩ হাজার ৬২৭ জনকে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হয়েছে। এদিন রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে ছয় হাজার ৬৪৪ জনকে ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়।
রোববার দুপুরে অধিদপ্তরের নিয়মিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে জানানো হয়, সোমবার থেকে সারা দেশে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া শুরু হবে এবং মঙ্গলবার থেকে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনে মডার্নার টিকা দেওয়া শুরু করা হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত বুধবার থেকে পুনরায় গণটিকাদানে নিবন্ধন চালু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওইদিন সুরক্ষা অ্যাপে দুই মাস পর আবারও নিবন্ধন কার্যক্রম উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএইচ’র লাইন ডাইরেক্টর ডা. শামসুল হক বলেন, সুরক্ষা অ্যাপে বুধবার সকাল থেকে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পঁয়ত্রিশ বছরের বেশি বয়সিরা এই টিকা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বাইশ ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন করা যাবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেই টিকা সংকটে গত ৫ মে নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ভারতীয় টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানি সেরাম ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় সংকট দেখা দেয়। ফলে বাধ্য হয়েই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা দেওয়ার কথা ছিল সেরাম ইনস্টিটিউটের। তবে ৭০ লাখ পাঠানোর পর টিকা রপ্তানিতে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। ভারত থেকে টিকা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই বিকল্প উৎসের সন্ধানে নামে বাংলাদেশ। চীন ও রাশিয়ার টিকা পেতে শুরু হয় তৎপরতা। এর মধ্যে গত মাসে এবং এই মাসে কোভ্যাক্স সুবিধা থেকে ২৫ লাখ ডোজ মডার্নার এবং ২০ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা পাওয়া গেছে।