হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কিছু কবিতা

 

একটি অঙ্গীকার ২
— হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

আমি যুগের বিপ­বের স্বপ্ন দেখেছি
আমার হাতে তখন শাসন দন্ড ছিলো
সেই দন্ডটিকে আমি উন্নয়ন
সমৃদ্ধি সংস্কারের জিয়নকাঠিতে
রূপান্তরিত করেছি যার ছোঁয়ায়
ঘুমন্ত বাংলা আরমোড়া দিয়ে
জেগে উঠেছিলো কোনো স্বপ্ন নয়
বাস্তবের আলো ছড়ানো ভোরের
রক্তিম সূর্য বিংশ শতাব্দীর
সায়ান্ন সময়ে নতুন বিশ্বের মিছিলে
সামিল হবার দুরন্ত প্রত্যয়ে।
সুষম উন্নয়নের ধারায় এলো একদার
অবহেলিত পিছিয়ে থাকা দক্ষিণবঙ্গ।

নিজের সৃষ্টিকে দেখার অপার আনন্দ
উপভোগের বাসনা আমাকে বারে বারে
নিয়ে গেছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে
অন্তহীন উচ্ছাস আমাকে জড়িয়ে ধরেছে
নদীর লজ্জা ভরা বুকটাকে কুয়াশার
কম্বলে ঢেকে রাখার মতো।
হেঁটেছি পিচ ঢালা সড়কে পার হয়েছি
ব্রীজ-কালভার্ট একদা যেখানে
সারি সারি বাঁধা থাকতো খেয়া নৌকা
যে গাঁয়ে এক সময়ে সন্ধ্যার আঁধার ঢাকতে
মিটি মিটি বাতিটা বেঁচে থাকতো
বাতাসের সাথে লড়াই করে।
সেখানে সুইজ টিপে আলোর জোয়ার
বয়ে দিলাম অন্ধকার মুছে দিয়ে।
সেই সৃষ্টি সুখের উল­াস আমাকে
ভাসিয়ে নিয়ে যায় অনেক বার
আরো বেশী বার সংগ্রামে সাহসী
মানুষের কাছে যারা এখন
সাবলম্বী। আমাকে ভোলেনি
সেই কৃতজ্ঞ দক্ষিণবঙ্গের মাটি ও মানুষ
দক্ষিণের পলিপড়া মাটি কথা বলে ফসলের
ফুল থেকে, গান করে কৃষকের কণ্ঠে।

আমি অনেক দিন শুনতে পাইনি
সেই কথা সেই গান,
আমার হাত বাঁধা ছিলো
আমার মুখ ছিলো কিন্তু
সেই মুখ মুক করে রাখা ছিলো আমার
কান ছিলো কিন্তু মাটি আর মানুষের
গান শুনতে কালা করে রাখা ছিলো।
ছ’ছটা বছরের প্রতিটা মূহুর্তকে
মৃত্যুর চেয়ে কঠিন অনুভব করে
বাঁচতে হলো আমাকে।
পুত্র-কণ্যা-স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন
মাটির ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত আর
মানুষের ভালবাসার পরশ থেকে
দুরে রাখা হলো আমাকে।

তার প্রতিবাদে মানুষেরা জাগলো
সোচ্চার হলো তাদের কণ্ঠ
মুক্তির রায় এলো ব্যালটের সিলে
অবাক বিশ্ব তাকিয়ে দেখলো
এ দেশের জনতা ইতিহাস গড়েছে
বিরল ইতিহাস মানুষের ভালবাসার।
আমি মুক্ত আলোতে বেরিয়ে এলাম,
আমার শুর“ করলাম যাত্রা
চারনের মতো পথ চলা,
খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে চাইলাম
আমার সাজানো বাগানের
ফুলগুলো ঠিক মতো ফুঁটে আছে তো!
নাকি ঝড়ে গেছে অবহেলায় অনাদরে
কিংবা তপ্ত রোদে শুকিয়েছে অথবা
ঝড়ের ঝাপটায় খসে গেছে বৃতি থেকে!
ডালের ফাঁকে বাসা বাঁধা পাখিটা
সকাল ও সাঁঝে সেই আগের মতো
গান গায় তো! নাকি কোনো
নিষ্ঠুর ব্যাধের বিষাক্ত শরাঘাতে
বুকটা তার বিদির্ন হয়ে গেছে!

দক্ষিনের নদীর ঢেউ আমাকে
হাত ছানি দেয় দেখে যাও
আমি কেমন আছি। সারা না দিয়ে
পারি না, ছুটে যাই সেখানে
জনতার সাগরে জাগে উর্মি
আমি অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে দেখি
মানুষের ভালবাসার ঢেউ।
যে ঢেউ আমাকে দুলিয়ে
ভুলিয়ে দেয় আমার
পড়ন্ত বিকেলে সকল ক্লান্তি,
ভুলে যাই পরিবার পরিজনের কথা,
উপেক্ষা করি সন্তানের
আদর মাখা  ঠোঁটের ছোঁয়া
লতার মতো জড়িয়ে রাখা তার
হাতের বাঁধন ব্যক্তি জীবন নির্বাসন দিয়ে।
আমি চৌদ্দ কোটি মানুষকে নিয়ে
গড়েছি আমার নতুন সংসার
বেঁধেছি ঘর গোটা দেশ জুড়ে।
সেই ঘর নতুন করে সাজাতে চাই
চৌদ্দ কোটির পরিবারকে
বাঁচাতে চাই, করেছি অঙ্গীকার
(১১ ফেব্র“য়ারি ২০০৬- এর দক্ষিণবঙ্গ সফর শেষে)

 

কোথাও হয়তো ঘটেছে প্রলয়
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

প্রকৃতি নিচ্ছে প্রতিশোধ এবার।
এতোদিন চুপচাপ সে দেখেছে
মানুষের অত্যাধিক আঘাত সমগ্র
পৃথিবী জুড়ে। দেশে বিস্তৃত অঞ্চল এখন
অচল। মাটি ও মানুষের সম্পর্ক নেই সেখানে।
কোথাও হয়তো ঘটেছে প্রলয় বৃষ্টি ও বাতাসে।

ঘন কুয়াশা আর হাড় কাঁপানো শীতে
বিদ্ধ— মানুষ; কোথাও মৃত্যু ঘটছে তাদের
খাদ্য ও বস্ত্রের অভাবে। গৃহহীন তারা অনেক
এলাকায়। অজানা অচেনা নয় জীবন, তবুও
রহস্যময় মনে হয় এদের অনেককে। অযতনে
লালিত সবুজ ঘাস পুড়ে গেছে অজান্তে। সন্তর্পণে
আমি হেটেছি অনেক। কোথায় ঘটলো প্রলয়
দেখতে নীরব অন্ধকারে। সত্যি কি ঘটেছে প্রলয় ?

শহর থেকে সান্নিধ্য গেছে হারিয়ে-
গ্রামে-গঞ্জে নেই গন্ধ ফসলের। পোড়া মাটি
ধুলো হয়ে উড়ে যাচ্ছে আকাশে। কুয়াশা
ঘিরে ফেলছে নদী নালা রাস্তাঘাট লোকালয়।

আমাকে গড়তে হবে আবার হারিয়ে যাওয়া
মাটি ও ফসলের আদি সম্পর্ক। নদীতে
আনতে হবে জোয়ার একাধিক ঋতুতে।
এবার আকস্মিক শীতে যেতে হবে ভাঙ্গনে।

আমার প্রিয় এ অঞ্চল এতো বিষন্ন কেনো ?
কেনো এতো নীরব প্রিয় পরিচিত মানুষ সব,
আমি কি চলে গেছি দূরে তাদের ছেড়ে ?
ক্লান্ত নই, তবুও ক্লান্তি নামে ভীষন। যখন
দৃষ্টি আটকে যায় প্রকৃতির ক্রন্দনের নিকটে।

এইতো এলাম আবার তোমাদের মাঝে
এলাম অতি দ্রুত সব পেছনে ফেলে;
দিন-রাত্রি শীত-বসন্ত সব ছেড়ে দিয়ে
আমি ঘন হতে চাই, এ ধুলো ও ধ্বনিতে।
আমার ইতিহাস এবার আমাকেই লিখতে হবে।

সাহিত্য, সংকৃতি আচার আকার সবকিছু
দ্র“ত বদলে যাচ্ছে জেনেও আমাকে আবার
সৃষ্টি করতে হবে প্রান্তর; ফোটাতে হবে হাঁসি,
আঁকতে হবে ছবি নতুন করে তাদের। পাথর
সরিয়ে আমাকে ফলাতে হবে ফসল অবিরাম।

একটু দাঁড়াও আমি আসছি-
কান্নায়, হাঁসিতে, শব্দে, জাগরণে
আমি আসছি তোমাদের মাঝে
সবকিছু পেছনে ফেলে। বঞ্চিত বালক
অনিবার্য কারণে আর থাকবে না পেছনে ক্রন্দনরত।
আমি আসছি তোমাদের দুঃখ বয়ে বেড়াতে
আমাকে তোমরা গ্রহন করো অবশেষে। ক্রান্তিরকালে।
হতভাগ্য দেশ
— হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

ভয়ানক দ্রুত গতিতে ঝড়ের বেগে
কোথায় চলেছে প্রিয় এ দেশ? হতভাগ্য এ দেশকে
ক্রমাগত করছে গ্রাস ভয়ানক ভীতি;
সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি
গ্রাস করেছে দেশের প্রতিটি অঙ্গ ও এলাকা;
দিশেহারা আজ সুশীল সমাজ, দিশেহারা
শহর-গ্রাম-গঞ্জের মানুষ। খুন-হত্যা-লুটপাট
চলছে লাগামহীন। আইন-নিয়ম-কানুন লুটছে
ধুলিতে; নিরাপত্তার অভাব চারিদিকে। একদিকে
মঙ্গা অন্যদিকে হাতিয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতা;
কখন কে কীভাবে লুটবে সম্পদ তার তীব্র
প্রতিযোগিতায় পদদলিত সাধারণ মানুষ।

ক্ষেতের ফসল নিয়ে লুকোচুরি। যাদের হাতে
উৎপাদন, যাদের লাঙ্গলের ফলায় ফলছে
ফসল-উঠোন শূন্য তাদের, ঘরে নেই খাবার।
শোনা যায় অভাবের নিদার“ন ডাক, ছুটছে
মানুষ যে যেদিকে পারে কাজের সন্ধানে। চলছে
ডাকাতি হাটে-বাজারে, অফিস আদালতে।
যাদের জন্য এ দেশ তাদের নাভিশ্বাস
আর মাঠের কিনারে বসে ক্ষুধার্ত হাতের
সংখ্যা বাড়ছে ক্রমাগত। এর শেষ কোথায়?
কে করবে উদ্ধার জানে না কেউ; শুধু
অসহায় মানুষ তাকিয়ে দেখছে অদ্ভুত
অনিশ্চয়তার বিরাট এক ঢালু বেয়ে নীচে, বহু নীচে
নেমে যাচ্ছে দেশ, এক অন্ধকার খাদে।

আনন্দ উৎসব আজ গল্পের মত শোনায়-
চারদিকে ক্ষমতার ভাগাভাগি, কাড়াকাড়ি অর্থের
সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রতিযোগিতায় কিছু মানুষ
ভুলে গেছে মৃত্যুকে, যার স্বাদ একদিন সকলকে
নিতে হবে। যেতে হবে কবরে- মাটির নীচে।
এর পরও কোথায় যেন বাঁচার আশ্বাস
কোথায় যেন শোনা যায় পাখির মিষ্টি ডাক
কোথায় যেন ভাসে সবুজ ফসলের গন্ধ
কোথায় যেন উঁকি দেয় আশার আলো।

সেই আলোর সন্ধান পেতে হবে, যেতে হবে
যত দুর যেতে হয় শান্তির সন্ধানে। এ দেশের
ক্ষেতে খামারে, ভাঙ্গা ঘরে ফোঁটাতে হবে জীবন সঙ্গীত
জীবনের মূল্যকে জাগাতে হবে প্রতিটি ঘরে।

তা না হলে
ক্ষমা নেই কারো
মাটি ও মানুষ
ক্ষমা করবে না কাউকেই।
(২৩ নভেম্বর- ২০০৩)

 

কৃষকের গান
— হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

শত বঞ্চনার শৃক্সখল ছিঁড়ে-
কৃষক জনতা দাঁড়িয়েছে ঘুরে-
এবার এ দেশের দুঃখ ঘুচবে।
কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে

আর নয় সময়ের অপচয়,
নয় কোনো ভাবে কোনো পরাজয়-।
ব্যর্থতার গ­ানি মুছে দিয়ে-
বিজয়ের দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে
নতুন দিগন্তে নতুন সূর্য
এবার উঠবে
কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে …..

হাতে হাত রেখে গোটা জাতি
চিরদিন চলবো,
বিপ­বে সংগ্রামে নির্ভরতার
কথা শুধু বলবো।

এ দেশের মাটিতে
লাঙ্গলের ফলাতে
এবার আবার নতুন করে
বাঁচার আশা জাগবে
কৃষক বাঁচবে বাংলাদেশ বাঁচবে

 

এটিএন বাংলার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে
সময়ের সাহসী সৈনিক
— হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

সময়ের সাহসী সৈনিক সে
একটি মাধ্যম একটি বিষ্ময়
নতুন যুগের নতুন সে
ইতিহাস ঐতিহ্যের সন্তান
আবহমান বাংলার লালিত স্বপ্ন
যেন চিরায়ত মুখ সে
এটিএন বাংলা ।

রূপে ও রসে, গন্ধে ও স্পর্শে
নিত্য নতুন অপরূপ রূপের
সমারোহ যার মোহ আবিষ্ট করে
অন্তর মন নিরন্তর সে
এটিএন বাংলা।

সুরে ও ছন্দে ভাবে ও ভাষায়
আশায় আর ভালবাসায়
কতো যে নিবির করেছে আমায়
প্রিয়সীর বাহু বন্ধনের মতো সে
এটিএন বাংলা।

বিংশ শতাব্দীর শেষ সিঁড়িতে
পা রেখে যার যাত্রা
হয়েছিলো শুরু এখন সে
নতুন শতাব্দীর পতাকা নিয়ে
যুগের চেয়েও এগিয়ে যাবার পথে
এটিএন বাংলা সে এটিএন বাংলা।

তারিখ: ১৩ জুলাই ২০০৪

 

বিজয়ের খবর পেলাম
— হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

একদা প্রভাতে আকাশে তাকিয়ে
দেখি একদা সাদা মেঘ
উড়ে যায় পূর্ব প্রান্তে যেখানে
লাল সূর্যটা নতুনভাবে
আলো ছড়াতে জেগে উঠেছে মাত্র।
আমি তখন পশ্চিমের বন্ধ ঘরের
জানালায় দাঁড়িয়ে শিকলপড়া
একটা তোতার কথা শুনছিলাম।

হঠাৎ আকাশে এক পরিচিত আকৃতির
মেঘটাকে দেখে জাগ্রত হলো
এক অপূর্ব অনুভূতি। একেবারে যেনো
সেই মেঘটা আমার দেশের
মানচিত্র। উত্তরে রংপুর-
মাথায় তার তেঁতুলিয়া চুড়া।
ঠিক মিলিয়ে দেখলাম দক্ষিণে
সুন্দরবনের বেড়াঘেরা খুলনা,
পূর্বের কোণাটা যেনো সিলেটের
মাথা থেকে নেমে গেছে
টেকনাফের সরু তীরটার দিকে।
পশ্চিম থেকে পদ্মা এঁকে বেঁকে এসে
মিশে গেছে বঙ্গোপসাগরে।

আমি বিস্ময়ে ভাবছিএমন করে
এই মেঘের মানচিত্র কত শিল্পী আঁকতে পারে!
নিশ্চয়ই ত্রিশ লাখের কম
হবেনা হয়তো, কিংবা তার সাথে আরো!
সেই মেঘটা আমাকে যেনো কোনো
বার্তা দিয়ে উড়ে গেলো সূর্যটার কাছে

আমি মেঘদুতের কাছেই প্রথম
খবর পেলাম এসেছে বিজয়
তারপর দেখি,তোতাটার পায়ের শিকল
খসে পড়েছে আর গাইছে,
আমার সোনার বাংলা আমি তোমায়….
সেই সুর শুনে আমি আবার নিশ্চিত
খবর পেলাম  এসেছে বিজয়!