কিভাবে হোম লোন পাবেন

কিভাবে হোম লোন পাবেন

হোম লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার যা জানা দরকার

হোমলোন নেওয়ার সময় আমরা সবাই অনেক বিচার বিবেচনা করি। “আমার বাসা! নিজের বাসা! আমার নিজের বাসা!” শব্দগুলো শুনলেই কেমন যেন একটা প্রশান্তি আসে মনে। নিজের বাসা বানানোর স্বপ্ন কার না থাকে! কারো কারো জীবনের অন্যতম স্বপ্নই এইটা, নিজের বাসা বানানো। নিজের বাসা বানানোর এই স্বপ্নটা কখনো কখনো আবার দুঃস্বপ্নও হয়ে দাঁড়ায়, পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে। এই মুহূর্তে একটি খুব-ই প্রচলিত প্রবাদ আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, “বিয়ে বলে, জুড়ে দেখ; বাড়ি বলে, ভেঙ্গে দেখ।” সুতরাং আমরা দেখতেই পাচ্ছি, বাসা বানানো কতটা ব্যয়বহুল! তবে এই ব্যয়বহুল এবং প্রায় দুঃসাধ্য কাজটি সহজ করতে পারে, হোমলোন। তবে হোমলোন নেওয়াও সহজ নয়, একটু কঠিন। হোমলোন নেওয়ার আগে আমাদের কিছু বিষয় একটু ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন হোমলোন পাওয়া খুব সহজসাধ্য হয়। আমরা হোমলোন নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানিয়ে আপনাদেরকে একটু সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। আপনাদের সুবিধার্থে হোমলোন নেওয়ার প্রয়োজনীয় ধাপগুলো নিচে পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করা হলঃ

আপনার আয়ঃ

হোমলোন নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনার মাসিক আয়, যার উপর ভিত্তি করে ব্যাংক আপনাকে লোন দিবে। প্রতিমাসে আপনার আয়ের পরিমাণ যদি নির্দিষ্ট থাকে তাহলে আপনার ব্যাংক লোন পাওয়া সহজ হবে। কেননা ব্যাংক আপনাকে লোন দেওয়ার আগে যে বিষয়টি যাচাই করবে তা হচ্ছে, আপনি ঠিকমত লোন পরিশোধ করতে পারবেন কিনা।

আপনি ঋণে জর্জরিত কিনাঃ

ব্যাংক আপনাকে লোন দেওয়ার আগে দ্বিতীয় যে বিষয়টির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে তা হচ্ছে, আপনি কোন প্রকার ঋণে জর্জরিত আছেন কিনা। ব্যাংক আপনাকে লোন দেওয়ার আগে আপনার ব্যাংক ব্যাল্যান্স এবং ব্যাংক হিষ্ট্রি সম্পর্কে একটা ভালো ধারনা নিবে। যারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ব্যাংক আপনার ক্রেডিট ব্যাল্যান্স সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারনা নিয়ে আপনাকে লোন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিবে। আপনি যদি মনে করেন, আপনার ক্রেডিট ব্যাল্যান্সের ডিউ খুব একটা সমস্যা করবে না তাহলে আপনি পুরোপুরি ভুল ভাবছেন। ক্রেডিট কার্ডের ডিউ আপনার লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে প্রভাব ফেলবে।

আপনার বয়সঃ

 আপনার বয়স একটি মুখ্য বিষয় হোমলোন নেওয়ার ক্ষেত্রে। আপনার বয়স যদি ৪০ বছরের বেশি হয় তবে ব্যাংক আপনাকে লোন দেওয়ার আগে শতবার ভাববে। কারণ তারা নিশ্চয়তা পাবেনা, আপনি লোন ঠিকমত পরিশোধ করতে পারবেন কিনা। সুতরাং ১৮-৩৫ বছর বয়সের মধ্যে হোমলোনের জন্য আবেদন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে করে আপনি লোন পরিশোধ করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন এবং একটি বড় অঙ্কের লোন পেতেও আপনার সমস্যা হবেনা।

আপনার ব্যাংক হিষ্ট্রিঃ

 আপনি এর আগে কোন ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছেন কিনা, যদি নিয়ে থাকেন তবে সেগুলো ঠিকঠাক ভাবে অর্থাৎ সময়মত পরিশোধ করেছেন কিনা.. আপনাকে লোন দেওয়ার আগে ব্যাংক এই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে। আপনি যদি এর আগে লোন নিয়ে থাকেন এবং সে লোন সময়মত পরিশোধ না করে থাকেন তাহলে আপনার লোন পেতে অনেক সমস্যা হবে। আপনি লোন না-ও পেতে পারেন। অতএব, হোমলোন বা যে কোন লোন নিতে হলে আপনার ব্যাংক হিষ্ট্রি ভালো থাকা একান্ত আবশ্যক।

আপনার কর্মপ্রতিষ্ঠানঃ

আপনি যদি মনে করেন, আপনি কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা অথবা আত্ম-কর্মসংস্থানে বিশ্বাসী তাই খুব সহজে এবং তাড়াতাড়ি লোন পাবেন তবে আপনি আবারও ভুল ভাবছেন। আপনার আয় উৎস আপনার লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব পেশার মানুষ সহজে লোন পেতে পারে না। আপনি যদি সরকারী চাকুরিজীবি হন অথবা আপনার প্রতিষ্ঠান যদি উচ্চ পর্যায়ে থাকে বা অতীতে থেকে থাকে তবে আপনার হোমলোন পেতে কষ্ট কম হবে, লোন পেতে আপনার একদম কষ্ট হবে না বললেই চলে। তবে আপনার কর্মরত প্রতিষ্ঠানের পজিশন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে আপনি বেশি অঙ্কের লোন পাবেন নাকি স্বল্প অঙ্কের। যদি আপনার কর্মপ্রতিষ্ঠান দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হয়ে থাকে তবে আপনাকে লোন পেতে মোটেও বেগ পেতে হবে না। কিন্তু আপনার কর্মপ্রতিষ্ঠান যদি দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি না হয়ে থাকে তবে আপনার বড় অঙ্কের লোন পেতে কষ্ট হবে। মূলত, আপনার পদমর্যাদার চেয়ে আপনার কর্মরত প্রতিষ্ঠান লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব ফেলে।

কীভাবে খুব সহজে লোন পাবেনঃ

কোন বিষয়গুলো দ্রুত হোমলোন পেতে সাহায্য করে সেগুলো আমরা জেনেছি। আসুন, হোমলোন পাওয়া কীভাবে নিশ্চিত করব সে সম্পর্কে একটু জেনে নেই।

নিম্নের শর্তাবলী মেনে চললে, লোন পরিশোধ করার জন্য আপনাকে বেশি ইন্টারেস্ট দিতে হবে না। আমি আবারও বলছি, আপনার যদি আগে কোন লোন নেওয়া থাকে তাহলে হোমলোন নেওয়ার আগে সেগুলো ক্লিয়ার করার চেষ্টা করুন। যদি লোন পরিশোধ করার জন্য আপনার কোন সহযোগী থাকে অর্থাৎ আপনার পরিবারের কেউ যদি আপনার সাথে লোনটি পরিশোধের দায়িত্ব নিতে চায় তাহলে অবিলম্বে আপনি হোমলোন পেতে পারবেন এবং খুবই স্বল্প ইন্টারেস্ট দিতে হবে। আপনার একাধিক আয়ের উৎসও অবিলম্বে লোন পেতে আপনাকে বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে।

একেক ব্যাংকের একেক সীমাবদ্ধতা আছে। এর মাঝে একেক জন আবার একেক ধরনের সেবা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। কেউ সময় অথবা সুদের হার কমিয়ে বাড়িয়ে মোটামুটি একটি সুন্দর সাধ্যের কাছাকাছি প্যাকেজ ছেড়েছে বাজারে। একে অবশ্য ব্যাংকার ভাষায় প্রোডাক্ট হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। একে একে তাই হোম লোন প্রোডাক্ট নিয়ে আলোচনা শুরু করি।

এইচ এস বি সি ( HSBC )

লোনের পরিমান BDT 750,000 – BDT 10,000,000

  • সর্বোচ্চ ৭০% মুল্য রেজিস্ট্রেশন খরচ সহ
  • রেজিষ্ট্রেশন খরচ সহায়তা
  • টাইম প্ল্যান ৫বছর থেকে ২৫বছর
  • বাড়ির বয়স ২৫বছরের বেশি হতে পারবে না।

কারা আবেদন করতে পারবেনঃ

  • বয়স ২৩ বছর হতে হবে।
  • প্রফেশনাল এক্সপেরিয়েন্স:
    বেতনভুক্ত: প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীতে ন্যুনতম ২বছের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
    ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান: দুই বছরের প্রমান সহ দক্ষতা থাকতে হবে।
  • ন্যুনতম মাসিক আয়:
    চাকুরিজীবি ৪০০০০টাকা
    নিজের প্রতিষ্ঠান: ৫০০০০টাকা

দরকারী কাগজপত্রঃ

  • মর্টগেজ এবং অরিজিনাল নামে ডিট
  • সম্পত্তির বীমা , প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা অগ্নি কভারেজসহ
  • সাধারন ক্ষমতা প্রদানের নথি(IGPA)

ইসলামী ব্যাংক হোম লোন, কিভাবে আবেদন করবেন?

ইসলামী ব্যাংক আপনাকে দিচ্ছে বাড়ি কেনা কিংবা বানানো অথবা রেডি ফ্ল্যাট কিনে নেয়ার সুযোগ। একে ইসলামী ব্যাংক লোন না বলে বলা যায় ইনভেষ্টমেন্ট ফর হাউজ অর্থাৎ বাড়ির জন্য বিনিয়োগ। বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক বাড়ির জন্য বিনিয়োগ করে থাকে। আসুন জেনে নিই দরকারি সব তথ্য।

সার্ভিসের নামঃ Bai-Muajjal / HPSM

লোনের পরিমানঃ (টাকায়, ১ মিলিয়ন = ১০লক্ষ)

১) নির্মানঃ ৬০% কিন্তু ১০মিলিয়নের বেশি নয়।

২) ফ্ল্যাট অথবা অ্যপার্টমেন্ট কেনাঃ ৫০% কিন্তু ৭.৫মিলিয়নের বেশি নয়।

৩। তৈরি বাড়িঃ ৫০%  কিন্তু ১০মিলিয়নের বেশি নয়।

বিনিয়োগের মেয়াদ কালঃ সর্বোচ্চ ১৫ বছর

গ্রাহকের ধরন/ কারা আবেদন করবেন?

সর্বোচ্চ ৬৫বছর বয়সের যে কোন চাকুরী জীবি, জমির মালিক, পেশাজীবি কিংবা অভিজ্ঞ ব্যক্তিগন আবেদনের যোগ্যতা রাখেন।

রিটার্নের হারঃ ১৫% কিংবা সময়ে সময়ে ব্যাংক কর্তৃক ধার্যকৃত হার।

কোথায় আবেদন করবেনঃ নিকটস্থ যে কোন শাখা অফিসে আবেদনের ফর্ম পাওয়া যাবে।