লিমিটেড কোম্পানী গঠন
ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান চালানোর এক পর্যায়ে অনেকেই সেটিকে কোম্পানীতে রুপান্তরিত করেন কিছু আইনগত সুবিধা নেবার জন্য। কোম্পানী গঠন করতে হলে সেটির একটি নাম দিতে হবে। কাঙ্খিত নামে রেজিষ্ট্রেশন করতে গেলে প্রথমে নামের ছাড়পত্র বা নেম ক্লিয়ারেন্স নিতে হবে। এরপর কিছু প্রক্রিয়া মেনে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। রেজিষ্ট্রেশন ফি অনুমোদিত মূলধনের ওপর নির্ধারিত হয়ে থাকে। ঢাকা অঞ্চলের জন্য এ কাজ করতে হলে কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনের সাত তলায় অবস্থিত নিবন্ধন দপ্তরে যেতে হবে। এ কাজটি সনাতন পদ্ধতিতে করা যায় আবার নিবন্ধন দপ্তরের কিওস্ক ব্যবহার করে অনলাইনেও করা যায়।
ঢাকা জোনের নিবন্ধন দপ্তর:
টিসিবি ভবন (সাত তলা), কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫
টেলিফোন +৮৮-০২-৮১৮৯৪০১, ৮১৮৯৪০৩
ফ্যাক্স: +৮৮-০২-৮১৮৯৪০২
ই-মেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: http://www.roc.gov.bd
প্রাইভেট লিমিটেড ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি:
প্রাইভেট লিমিটেড ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। এ দুই ধরেনর কোম্পানির মধ্যে মাত্র একটি বিষয়ে মিল রয়েছে-সেটি হচ্ছে এ ধরনের কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার যে পরিমাণ শেয়ার ধারণ করেন কোম্পানির দায়-দায়িত্ব তার উপর ততটুকুই বর্তায়। কোম্পানি লভ্যাংশ বিতরণ করলে শেয়ারহোল্ডার তার ধারণকৃত শেয়ার সংখ্যার অনুপাতে লভ্যাংশ পান। আবার লোকসান বা ঋণ থাকলে তার দায়িত্বও আনুপাতিক হারে বহন করতে হয়। পুরো দায় কোনো শেয়ারহোল্ডারকে নিতে হয় না।
কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে:
০১. শেয়ারহোল্ডার সংখ্যা: প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে ন্যূনতম শেয়ারহোল্ডার থাকতে হয় দুই জন। আর সর্বোচ্চ শেয়ারহোল্ডার হতে পারে ৫০ জন। এর বেশি শেয়ারহোল্ডার নিতে হলে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করতে হয়। অন্যদিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ন্যুনতম ৭ জন শেয়ারহোল্ডার থাকতে হয়। কিন্তু শেয়ারহোল্ডারের সর্বোচ্চ কোনো সংখ্যা থাকে না। অর্থাৎ যথাযথ প্রক্রয়া অনুসরণ করে, ক্ষেত্র বিশেষে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে যে কোনো সংখ্যক শেয়ার ইস্যু করা যায়।
০২. শেয়ার হস্তান্তর : প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর ও ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ থাকে, যা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্র থাকে না। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির কোনো শেয়ারহোল্ডার শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে তাকে বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যই তা বিক্রি করতে হয়। তবে তাদের সম্মতি সাপেক্ষে বাইরের কোনো ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রি বা জস্তান্তর করা যায়। অন্যদিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা তাদের পছন্দমাফিক যে কারো কাছে নিজ নিজ শেয়ার বিক্রি করতে পারেন।
০৩. সাধারণের কাছে শেয়ার বা বন্ড বিক্রি: প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্র এ সুযোগ নেই। অর্থাৎ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি জনসাধারণের কাছে শেয়ার এবং ডিবেঞ্চার ও বন্ডসহ কোনো ধরণের ঋণপত্র বিকি্র করতে পারে না। পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জনসাধারণের কাছে শেয়ার ও বন্ড বিক্রি করতে পারে।
প্রক্রিয়া:
নিবন্ধকের কাছে নিবন্ধন ফি দিয়ে কোম্পানীর তিনটি সম্ভাব্য নাম প্রস্তাব প্রস্তাব করতে হবে। আগে নিবন্ধন করা হয়েছে এমন নাম পাওয়া যাবে না। http://www.roc.gov.bd সাইট থেকে নামের একটি তালিকা দেখা যেতে পারে। নাম অনুমোদনের পর দু’জন সাক্ষীর সামনে সংঘ বিধি ও সংঘ স্মারকে সাক্ষর করতে হয়। এই সংঘ বিধি ও স্মারকে বিশেষ স্ট্যাম্প লাগাতে হয় সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে হয়। টাকার পরিমাণ অনুমোদিত মূলধনের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে।
—প্রাইভেট কোম্পানী হলে স্ট্যাম্পযুক্ত সংঘবিধি, তিন কপি স্মারক ও সংঘবিধি পূরণ করে ১, ৬, ৯, ১০ ও ১২ ছাড়পত্র, বিশেষ স্ট্যাম্প ক্রয় সংক্রান্ত চালানের ফটোকপি জমা দিতে হয়।
—পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী গঠনের ক্ষেত্রে এসব কাগজপত্র ছাড়াও প্রসপেক্টাসের বিকল্প বিবরণী, ব্যবসা শুরুর ঘোষণা পত্র এবং বিশেষ ক্ষেত্রে ফরম ১১ জমা দিতে হয়।
—রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ এন্ড ফার্মস কোম্পানীগুলোর মালিকানা এবং তালিকভুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদারক করে। প্রাইভেট, পাবলিক এবং বিদেশী কোম্পানীর রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াও বাণিজ্যিক সংস্থা ও যৌথ মালিকানাধীন কোম্পানীর রেজিস্ট্রেশনের কাজ করা হয় এখানে।
নেম ক্লিয়ারেন্স:
প্রস্তাবিত নামের অনুমোদন নেয়া বা নেম ক্লিয়ারেন্স নিতে প্রতি নামের জন্য ১০০ টাকা ফি দিতে হয়।
সংঘ স্মারকে ৫০০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্প এর অতিরিক্ত স্ট্যাম্প লাগানোর নিয়ম:
মূলধনের পরিমাণ | টাকার পরিমাণ |
১০ লাখ টাকা পর্যন্ত | ২,০০০ টাকা |
১০ লাখ এক টাকা থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত | ৪,০০০ টাকা |
৩ কোটির ঊর্ধ্বে যোকোন অংকের জন্য | ১০,০০০ টাকা |
রেজিস্ট্রেশন ফি
মোট ছয়টি কাগজ জমা দিতে হয়, পাঁচটি পূরণকৃত ফরম এবং একটি সংঘ স্মারক। প্রতি কাগজের জন্য ২০০ টাকা করে মোট ১,২০০ টাকা জমা দিতে হয়।
অনুমোদিত মূলধনের জন্য ফি:
মূলধনের পরিমাণ | ফি-এর পরমাণ |
২০,০০০ টাকা পর্যন্ত | ৩৬০ টাকা |
২০,০০০ টাকা অতিক্রমের পর ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি ১০,০০০ টাকার জন্য | ১৮০ টাকা |
৫০,০০০ টাকা অতিক্রমের পর ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি ১০,০০০ টাকার জন্য | ৪৫ টাকা |
৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রতি দশ হাজারের জন্য | ২৮ টাকা |
এরপর প্রতি এক লাখের জন্য | ৪৫ টাকা |
তথ্যসূত্রঃ অনলাইনঢাকা