মন্ত্রী, সাংসদ ও নেতাদের দ্বন্দ্বে অস্থির আ.লীগ
• প্রতি আসনে ৩-৪ জন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।
• আ.লীগের মনোনয়নে বড় পরিবর্তন হতে পারে।
নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর সঙ্গে সাংসদদের; মন্ত্রী-সাংসদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের বহুমুখী দ্বন্দ্ব ক্রমেই বাড়ছে। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ে দলে অস্থিরতা রয়েছে। এই দ্বন্দ্ব-কোন্দলকে আগামী নির্বাচনে জয়ের পথে বড় বাধা বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা।
আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মন্ত্রী-সাংসদদের মধ্যে ৬০-৭০ জন বাদ পড়তে পারেন। কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন বয়সের কারণে। দুর্নামের কারণেও কারও কারও বাদ পড়ার সম্ভাবনা আছে। জোট-মহাজোটকে ছাড়, নির্বাচনে কৌশলগত সুবিধা নেওয়া এবং দলীয় তহবিলের কথা বিবেচনা করে কিছু সাবেক আমলা ও ব্যবসায়ীকে স্থান দিতে গিয়ে বাদ পড়তে পারেন অনেকে।
বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্ভাব্য নতুন প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। পুরোনো সামাজিক সংগঠনের তৎপরতা বেড়েছে, নতুন সংগঠন গজাচ্ছে। দুর্যোগে ত্রাণ দেওয়া, বাঁধ নির্মাণে অংশ নেওয়া, এলাকায় পুনর্মিলনী-শুভেচ্ছা বিনিময়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে চাঁদা দেওয়া, বিভিন্ন খেলাধুলার টুর্নামেন্টের আয়োজন—এগুলোই তাঁদের প্রার্থিতা ঘোষণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের সচিত্র বর্ণনা নিজের ও সমর্থকদের ফেসবুক পেজে শোভা পাচ্ছে।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৯ জন বাদ পড়েন। গঠনতন্ত্র অনুসারে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ৮১ সদস্যের। তবে বর্তমান কমিটিতে চারটি পদ ফাঁকা থাকায় সদস্যসংখ্যা ৭৭। তাঁদের ৪২ জন সাংসদ নন। কেন্দ্রীয় নেতাদের এই অংশটির প্রায় সবাই নিজ নিজ এলাকায় যাতায়াত বাড়িয়েছেন এবং মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। ফলে বর্তমান সাংসদের সঙ্গে তাঁদের দ্বন্দ্ব লেগেই আছে।
এর বাইরে সারা দেশে ৪৮৯টি উপজেলা পরিষদের প্রায় ৭০ শতাংশের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের। আগামী জাতীয় নির্বাচনে অন্তত অর্ধেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক বৈঠকে দলীয় কোন্দলকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জনের পথে প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পরের দিন দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সাংগঠনিক সম্পাদকেরা তাঁদের প্রতিবেদনে এবং কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্যে দলীয় কোন্দলের কথা তুলে ধরেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ কারা করছে, তা খুঁজে বের করতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের বয়স হয়েছে, দল প্রায় ১০ বছর ধরে টানা ক্ষমতায়। প্রতি আসনেই ৫ থেকে ১০ জন যোগ্য প্রার্থী আছেন। সমীক্ষা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া কঠিন হবে না। এরপরও সমস্যা হলে তা সমাধানের সাংগঠনিক নানা পদ্ধতি আছে। তিনি জানান, এবার মনোনয়ন কিছুটা আগে ঘোষণা হতে পারে।
মন্ত্রী ও বড় নেতাদের আসনে তৎপরতা
সিলেট সদর আসন থেকে আর নির্বাচন না করার ঘোষণা কয়েকবারই দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই আসনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর ভাই ও জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এম এ মোমেনও প্রার্থী হতে আগ্রহী। দলের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ থাকার কারণে তাঁর সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রার্থী করা হতে পারে—এমন আলোচনাও দলে আছে। সিলেট মহানগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান সিলেট সিটি করপোরেশনের সম্ভাব্য প্রার্থী। কোনো কারণে সিটি নির্বাচন আটকে গেলে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থিতার তালিকায় তিনিও যুক্ত হতে পারেন।
ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের সঙ্গে জামাতা ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদের বিবাদ তুঙ্গে। ভূমিমন্ত্রীর বয়স হয়েছে। উত্তরাধিকার কে হবেন—এ নিয়ে মন্ত্রীর ছেলে ও জামাতার দ্বন্দ্ব সংঘাতে রূপ নিয়েছে একাধিকবার। মন্ত্রীর ছেলেকে কারাগারেও যেতে হয়েছে। এই বিবাদের জের মনোনয়নেও পড়তে পারে বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
ফরিদপুরের ভাঙ্গার সাবেক সাংসদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ। এক-এগারোর পর ২০০৮ সালে তিনি নির্বাচন করতে না পারায় তাঁর স্ত্রী নিলুফার জাফর উল্যাহ সাংসদ হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কাজী জাফর উল্যাহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও সাংসদ নূর ই আলম চৌধুরীর ভাই মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী ওই আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী হন। এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সাপে-নেউলে সম্পর্ক। দলীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কাজী জাফর উল্যাহই পাবেন। তবে নিক্সন আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে আলোচনা আছে।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী বয়সের কারণে আগের মতো দল ও সংসদ কার্যক্রমে সক্রিয় থাকতে পারছেন না। তাঁর আসনে এবার নতুন প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জোর আলোচনা আছে। এ ক্ষেত্রে সাজেদা চৌধুরীর ছেলে নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আয়মান আকবর চৌধুরীর নাম আসছে। স্থানীয় আরও কয়েকজন নেতা প্রার্থীর হওয়ার লক্ষ্যে প্রচার চালাচ্ছেন।
জোটের কারণে গত নির্বাচনে চট্টগ্রামে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের আসনটি জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই আসনে নতুন করে প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
গাইবান্ধায় ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন।
কেরানীগঞ্জের একাংশ, ঢাকার হাজারীবাগ ও সাভারের একাংশ নিয়ে ছিল খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের আসন। সীমানা পুনর্নির্ধারণের কারণে এই আসন থাকছেই না। কেরানীগঞ্জের সাংসদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। আর সাভারের বর্তমান সাংসদ এনামুর রহমান। এখন কামরুল ইসলামের স্থান কোথায় হয়, এ নিয়ে চলছে আলোচনা।
নতুনদের তৎপরতা, পুরোনোদের উদ্বেগ
চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। এই আসনে কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ-বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী দৌড়ঝাঁপ করছেন। এই দুই নেতাকে নিয়ে কেন্দ্রীয় অন্য নেতারাও দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ দীপু মনির, আবার কেউ সুজিত নন্দীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
নেত্রকোনার পূর্বধলা আসনের সাংসদ ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল। তবে এবার সেখান থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। দুই পক্ষের মধ্যে টুকটাক সংঘাত লেগেই আছে। যদিও আহমদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ধারণা, এবার তিনি মনোনয়ন পাবেন। কাজও করছেন।
পিরোজপুর সদরে বর্তমান সাংসদ এ কে এম আউয়াল। আপন ভাইদের সঙ্গে কোন্দলের জন্য আলোচিত। কিন্তু এবার এই আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য তৎপর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম। মনোনয়নের জন্য তৎপর বঙ্গবন্ধুর চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী শেখ অ্যানি রহমানও।
শ ম রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এখন সপ্তাহে দুবার এলাকায় যাচ্ছেন। তাঁর বিশ্বাস, তিনি মনোনয়ন পাবেন।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে বর্তমান সাংসদ মো. সোহরাব উদ্দিন। তাঁর বাইরে এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ। তিনি এলাকায় জনসংযোগও করছেন। নূর মোহাম্মদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অবসর নেওয়ার পর থেকেই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করছেন। আওয়ামী লীগ তাঁকে সুযোগ দিলে তিনি মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন। এই আসনে এর বাইরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল, পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি এম এ মান্নান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোকলেছুর রহমানও মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে আছেন।
নেত্রকোনার আটপাড়া ও কেন্দুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রার্থী হতে চান। এই আসনের বর্তমান সাংসদ ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার। অসীম কুমার উকিলের স্ত্রী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলও দলে পরিচিত মুখ। নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, ২০০৮ সালে অসীম মনোনয়ন না পাওয়ায় তাঁর স্ত্রীকে সংরক্ষিত মহিলা সাংসদ করা হয়। এবার কী হয়, তা দেখার বিষয়। অসীম উকিল প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এবার মনোনয়ন আশা করছেন।
শরীয়তপুর নড়িয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনের বর্তমান সাংসদ সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী দলে কোণঠাসা। তিনি অসুস্থও। তাঁর হয়ে ছেলে খালেদ শওকত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তৎপর আছেন। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম এখানে প্রার্থী হতে চান। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের ভাই ইসমাইল হক উপজেলা চেয়ারম্যান, স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী। এই আসনে পরিবর্তন ও নতুন প্রার্থীর সম্ভাবনা—এই দুটিই জটিল বিষয় বলে মনে করছেন দলের নেতারা।
শরীয়তপুর সদরে বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেনও এ আসনে সক্রিয়। দলের একটা প্রভাবশালী অংশ ইকবালের প্রতি সহানুভূতিশীল। তবে শীর্ষ নেতৃত্ব পরিবর্তনের পথে হাঁটবেন না বলেই বেশির ভাগ নেতা মনে করেন।
মাদারীপুরে শাজাহান খান আর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের মধ্যে দ্বন্দ্ব পুরোনো। গত নির্বাচনে শাজাহান খানকে সদর আসনে রেখে বাহাউদ্দিনকে কালকিনিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়। পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারিতে বাদ পড়া সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন কালকিনি থেকে তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান এবং কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেনের বাড়িও একই আসনে। তাঁরাও তৎপর আছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকার দোহার-নবাবগঞ্জ আসনে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মান্নান খান জাতীয় পার্টির সালমা ইসলামের কাছে হেরে যান। এবার আওয়ামী লীগ সভাপতির বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এখানে মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে আলোচনা আছে। এর মধ্যে মান্নান খানকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে।
নরসিংদীর রায়পুরা আসনের সাংসদ রাজিউদ্দিন আহমেদ। বয়সের কারণে তাঁর তৎপরতা কম। জেলার রাজনীতিতে দ্বন্দ্বের কারণে অনেকটা সমালোচিতও। তাঁর ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকায় তা প্রচারও করেছেন। আবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এ বি এম রিয়াজুল কবিরও সক্রিয়। তিনি এলাকায় জনসংযোগও করছেন।
চট্টগ্রাম লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার একাংশ নিয়ে গঠিত আসনে বর্তমান সাংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন নদভীর আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম তৎপর আছেন। নদভীর শ্বশুর জামায়াতের রাজনীতি করেন এবং নদভীকে নিয়েও দলে সমালোচনা আছে।
যশোর সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হয়েছিলেন কাজী নাবিল আহমেদ। এবার মনোনয়ন চাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদারও। তবে এই আসনে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন নীতিনির্ধারকেরা।
গত নির্বাচনে কুমিল্লা সদরে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার দলীয় মনোনয়নে জয়ী হলেও বিদ্রোহী হিসেবে ভোটে লড়েন মাসুদ পারভেজ খান। মাসুদ পারভেজের বাবা আফজল খানের সঙ্গে বাহারের দ্বন্দ্ব পুরোনো। এখানে একজন মনোনয়ন পেলে অন্যজন বিদ্রোহী হতে পারেন।
ঢাকা-১৩ আসনে বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এ আসনের সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেনও একজন শক্তিশালী প্রার্থী। তিনি দলের উপদেষ্টা পরিষদেরও সদস্য। এখানে দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানও মনোনয়নপ্রত্যাশী।
দলীয় মনোনয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য এবং প্রভাবশালী কিছু নেতা ও মন্ত্রীদেরসহ ৪০-৫০টি আসনে নতুন প্রার্থীর প্রকাশ্যে তৎপরতা নেই। বাকি আসনগুলোতে গড়ে নয়জন করে প্রার্থী মাঠে আছেন। মনোনয়ন, দলীয় পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও উন্নয়নকাজের ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্ব এতটাই প্রকট যে কোথাও কোথাও মারামারিও হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে দ্বন্দ্ব-সংঘাতটা বেশি হয়েছে। এটা নিয়ে দল কাজ করছে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা দলের নেতা-কর্মীরা বোঝেন। জাতীয় নির্বাচনে দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, তাঁর পক্ষেই সবাই কাজ করবেন বলে তিনি আশাবাদী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, আওয়ামী লীগে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে মনোনয়ন নির্ধারণে হয়তো কোনো সমস্যা হবে না। তবে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীকে ভোটাররা কীভাবে নেবেন এবং মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীরা কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, সেটাই দেখার বিষয়।
সূত্র: প্রথম আলো