প্রিন্ট মিডিয়ায় ক্যারিয়ার গড়বেন যেভাবে

প্রিন্ট মিডিয়ায় ক্যারিয়ার

আধুনিক কালে মানুষের সমাজ সচেতনতা ও তথ্যের প্রতি আগ্রহের ক্রমবৃদ্ধির কারণে প্রিন্ট মিডিয়ার ব্যাপক প্রসার হয়েছে। যার ফলে নিত্য নতুন কর্মসংস্থানের দিক উন্মোচিত হচ্ছে। দিন দিন এই ক্ষেত্রে তরুণ তরুনীদের ক্যারিয়ার গড়ার হার বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশী। কিন্তু ক্যারিয়ার গড়ার অদম্য আগ্রহ থাকা স্বত্বেও অনেকেই পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে হয়তো প্রিন্ট মিডিয়ার মতো এমন জনপ্রিয় ক্ষেত্রে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। তাদের সুবিধার্থে প্রিন্ট মিডিয়া সম্পর্কিত কিছু তথ্য এবং কিছু অভিজ্ঞ ব্যাক্তিদের মূল্যবান পরামর্শ নিয়ে তৌরি করা হয়েছে আমাদের এই বিশেষ নিবন্ধ।

ক্যারিয়ার হিসাবে প্রিন্ট মিডিয়াঃ

প্রযুক্তিতে আমূল পরিবর্তন আসার পর থেকেই প্রিন্ট মিডিয়ায় ক্যারিয়ার গড়ার প্রতি তরুণদের আগ্রহের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। নিত্য নতুন বিভাগ, ফটো সাংবাদিকতা থেকে আর্টিষ্ট, কার্টুনিষ্ট সহ আরো অনেক বিভাগ যুক্ত হয়েছে এই ক্ষেত্রটিতে। আর এরই পাশাপাশি লেখকদের জন্য তৈরি হয়েছে এক সুবিশাল সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। সৃজনশীলতার এক অন্যতম ক্ষেত্র এই প্রিন্ট মিডিয়া।

প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজের ক্ষেত্র সমূহঃ

খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে প্রিন্ট মিডিয়াকে বর্ণনা করার কোন অবকাশ নেই। কারণ ক্ষেত্রটি বিশাল এবং বিস্তৃত। প্রিন্ট মিডিয়াতে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য রয়েছে অনেক রকম ক্ষেত্র। পত্রিকাভেদে এই ক্ষেত্র সমূহের মধ্যে রকম ফের হয়ে থাকে। অনেকেই প্রিন্ট মিডিয়ায় ক্যারিয়ার গড়ার ভিত্তি হিসাবে রিপোর্টার পদে চাকরি শুরুর কথাই ভেবে থাকেন। কিন্তু রিপোর্টার পদ ছাড়াও পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনগুলো বিভিন্ন পদের জন্য যেমন, ফটোসাংবাদিক, আর্টিষ্ট, কম্পিউটার এক্সপার্ট, কার্টুনিষ্ট সহ বিভিন্ন পদে কর্মী নিয়োগ করে থাকে। সাধারণত সংবাদ মাধ্যমে ৬ টি বিভাগ আলাদাভাবে কাজ করে থাকে। এই বিভাগগুলো হচ্ছেঃ

  • সম্পাদকীয় বিভাগ
  • বার্তা বিভাগ
  • রিপোর্টিং বিভাগ
  • ফটোগ্রাফি বিভাগ
  • বিতরণ বিভাগ
  • বিবিধ বিভাগ

সম্পাদকীয় বিভাগ

সম্পাদকীয় বিভাগের কাজের মধ্যে রয়েছে সম্পাদকীয় নিবন্ধ লেখা। সম্পাদক সাধারণত নিজে লিখে থাকেন প্রথম সম্পাদকীয় কলাম। এই বিভাগের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাঁরা হলেন সম্পাদক, ব্যাবস্থাপনা সম্পাদক, কয়েকজন সহ-সম্পাদক এবং রিপোর্টার।

সম্পাদকঃ

সম্পাদক সংবাদপত্রের প্রধান কার্যনির্বাহী। সমগ্র প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাঁর হাতেই ন্যস্ত। তিনি পত্রিকাটির সম্পাদনা, নীতি নির্ধারণ, নিয়ন্ত্রণ ও বাস্তবায়ন করে থাকেন। সহজ কথায় সংবাদপত্রের দায়িত্ব সম্পাদকের। কাগজে যা-ই ছাপা হোক, এর ভালোমন্দের দ্বায়িত্ব বর্তায় তাঁর উপর। সমস্ত সাংবাদিক তাঁর অধীন। সম্পাদকীয় বিভাগে অথবা সংবাদ কক্ষের প্রধান ব্যাক্তি তিনি। সম্পাদক বিশেষভাবে পত্রিকার সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় বিষয়াবলীর জন্য দায়বদ্ধ। সাধারণত ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক ও সম্পাদকীয় পাতার সম্পাদক বা সহকারী সম্পাদকের মাধ্যমেই সচরাচর সম্পাদকের প্রভাব সবর্ত্র বিস্তৃত হয়ে থাকে।

ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ

একজন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক প্রতিদিনকার সংবাদগুলো পত্রিকার কোন পাতায় কোন কলামে ছাপা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তিনি সংবাদ কক্ষের বাজেট প্রণয়ন এবং সম্পাদকীয় বিভাগের পলিসি প্রণয়ন জাতীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বড় সংবাদপত্রে তিনি তাঁর কাজের দায়-দায়িত্ব এক বা একাধিক সহকারীর মধ্যে বন্টন করে থাকেন।

নির্বাহী সম্পাদকঃ

প্রধান উপ-সম্পাদকীয় এবং বিশেষ নিবন্ধ লেখা ছাড়াও নির্বাহী সম্পাদক পত্রিকার সম্পাদকীয়, রিপোর্টিং, বার্তা, সম্পাদনা সহকারী বিভাগের কার্য পরিচালনা, পরিকল্পনা এবং সমন্বয় সাধন করবেন। এছাড়া সম্পাদক তাঁকে যখন যে কাজের দ্বায়িত্ব দেবেন তিনি তা সম্পাদন করেন।

বার্তা বিভাগ

বার্তা বিভাগের প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন একজন বার্তা সম্পাদক। পত্রিকার বিস্তৃতি অনুযায়ী বার্তা সম্পাদকের সহযোগী হিসাবে উপ-সম্পাদক এবং কয়েকজন সহযোগী সম্পাদক কাজ করে থাকেন।

বার্তা সম্পাদকঃ

একজন বার্তা সম্পাদক সংবাদকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাছাই ও সম্পাদনা করে পরের দিন পাঠকদের একটি সুন্দর সংবাদপত্র উপহার দিয়ে থাকেন। তিনি নিউজ রুমের প্রধান দায়িত্ব পালন করেন এবং সকলেই তাঁর অধীনে কাজ করেন। সংবাদ বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও একজন বার্তা সম্পাদককে অত্যন্ত সর্তক থাকতে হয়। তাঁকে খেয়াল রাখতে হয় কোনো অহেতুক প্রচার, অবমাননাকর উক্তি, রং চড়ানো বক্তব্য, মানহানি বা আইন লঙ্ঘন করার মতো কিছু লেখার মধ্যে রয়েছে কিনা। যে কোনো খবরের ক্ষেত্রে তিনি এডিটরের প্রত্যক্ষ সাহায্য গ্রহণ করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে বার্তা সম্পাদকের এক বা একাধিক সহকারী থাকে। এদেরকে কাজ ভাগ করে দেয়া হয়। তবে বার্তা সম্পাদকই এ বিভাগের প্রধান। বার্তা সম্পাদকের অধীনে যারা কাজ করেন তাঁরা হলেন চিফ রিপোর্টার, চিফ সাব-এডিটর, সাব-এডিটর, রিপোর্টার, প্রুফ রিডার, ফটোগ্রাফার, কার্টুনিষ্ট, আর্টিস্ট প্রমুখ।

রিপোর্টিং বিভাগ

রিপোর্টিং বিভাগের মূল কাজ হলো প্রাসঙ্গিক খবর অনুসন্ধান করে তা বার্তা বিভাগে প্রেরণ করা। জানার আগ্রহ, বিচার বিশ্লেষণ এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা নিয়ে এই বিভাগের কর্মীরা কাজ করে থাকেন। সাধারণত, রিপোর্টিং বিভাগের পদগুলো হলো চিফ রিপোর্টার, সিনিয়র রিপোর্টার, স্টাফ রিপোর্টার এবং বিশেষ প্রতিনিধি। একজন স্টাফ রিপোর্টার সাধারণত প্রাপ্ত সংবাদের প্রতিবেদন করতে মাঠ পর্যায় গিয়ে তা অনুসন্ধান এবং বস্তু-নিষ্ঠতা যাচাই করে তা চিফ রিপোর্টারের কাছে উপস্থাপন করেন। তাদের কাজের ধরণ অনেক চ্যালিঞ্জিং হয়ে থাকে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিনোদন সব বিষয়ে ধারণা রাখতে হয়। মেধা, শ্রম এবং ধৈর্য্যের সাথে কাজ করে একজন রিপোর্টার অল্প সময়ে সিনিয়র রিপোর্টার / চিফ রিপোর্টার এমনকি বার্তা বিভাগে বিভিন্ন পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। সিনিয়র রিপোর্টার / চিফ রিপোর্টার সাধারণত স্টাফ রিপোর্টারদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। রিপোর্টিং বিভাগের কাজ যেখানে শেষ হয় সেখানে শুরু হয় বার্তা বিভাগের কাজ। একজন স্নাতক / স্নাতকোত্তর এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে প্রথমে শিক্ষানবিশ / সহকারী রিপোর্টার হিসাবে কাজ শুরু করেন থাকেন। তবে অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধিমতা ব্যাবহার করে অল্প সময়ের মধ্যে সিনিয়র / চিফ রিপোর্টার হতে পারেন। পত্রিকাভেদে একজন চিফ রিপোর্টারের বেতন ৩০-৫০ হাজার হয়ে থাকে।

ফটোগ্রাফি বিভাগ

একজন ফটোগ্রাফার বা ফটো সাংবাদিকের দায়িত্বও কোনো অংশে কম নয়। রিপোর্টার যে রিপোর্ট লেখেন তাঁর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছবি তুলে আনেন ফটো সাংবাদিক। কখনো একজন ফটোসাংবাদিকের তোলা ছবিই হয়ে উঠতে পারে মূখ্য সংবাদ। একজন ফটো সাংবাদিক এর যেমন রয়েছে কাজ করার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা তেমনি ঝক্কি-ঝামেলাও কম নয়। যুদ্ধ এবং দাঙ্গার ছবি তুলতে গিয়ে ফটো সাংবাদিককে জীবন-বাজি পর্যন্ত রাখতে হয়। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে ছবি তুলতে হয়।

বিতরণ বিভাগ

এই বিভাগের কর্মীরা সাধারণত ছাপাখানা থেকে শুরু করে পাঠকের হাতে পত্রিকা পৌছানো পর্যন্ত দরকারি কাজগুলো সম্পাদন করে থাকে। এই ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের supply chain management- এ দক্ষতা থাকতে হয়। শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাগুলোতে যারা বিতরণ বিভাগে কাজ করেন তাঁরা সাধারণত খুব ভালো বেতন কাঠামো উপভোগ করে থাকেন।

অনান্য বিভাগ

অনান্য সেক্টরের মতো প্রিন্ট মিডিয়াতেও একাউন্টিং, ফিনান্স, মানব সম্পদ, মার্কেটিং এবং আইটি বিভাগেও বিভিন্ন পদ রয়েছে। আনুসাঙ্গিক ডিগ্রি নিয়ে উক্ত পদগুলোতে একজন ইচ্ছা করলে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এসব পদে কাজ করে অভিজ্ঞ কর্মীরা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ পেয়ে থাকে।

নিজেকে যেভাবে তৈরি করবেন

বর্তমান সময়ে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য প্রিন্ট মিডিয়া অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র উন্নত ক্যারিয়ার, সফলতা আর সামাজিক মর্যাদা অর্জন করা এই পেশার মূল লক্ষ্য নয়। এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে হলে একজন ব্যক্তিকে কিছু বৈশিষ্টের অধিকারী অবশ্যই হতে হবে। উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – সাহস, অন্তর্দৃষ্টি, যোগ্যতাসম্পন্ন, প্রতিযোগী মনোভাবসম্পন্ন, ফটোগ্রাফি, ভাষার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। শুধুমাত্র প্রিন্ট মিডিয়াতে ক্যারিয়ার গড়ার জন্যই নয় বরং উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য একজন ব্যাক্তিকে যেকোন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার সহায়ক হিসাবে কাজ করবে। শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সাধারণত ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’ বিষয়ে ডিগ্রিধারীদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এছাড়াও অনান্য মাধ্যমে পড়াশোনা করা কেউ চাইলে ডিপ্লোমা করেও নিজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করে এ পেশায় আসতে পারেন।তথ্যসূত্রঃ বিডিজবস